সফরকালে তিনি মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স ছাড়াও মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিয়া আহমেদ দিদির সঙ্গে আনুষ্ঠিক বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন সেনাপ্রধান।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির পক্ষ হতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। প্রত্যুত্তরে জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। মারিয়া আহমেদ দিদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশটি কীভাবে উপকৃত হতে পারে সেই সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন। এছাড়াও, মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিয়া আহমেদ দিদি মালদ্বীপের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেন।
পরবর্তীতে জেনারেল আজিজ আহমেদ মালদ্বীপ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ শামাল এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে দ্বিপাক্ষিক সভায় যোগ দেন। জেনারেল আব্দুল্লাহ শামাল তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানান।
একই সাথে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি মেডিকেল দলকে মালদ্বীপে প্রেরণ করার জন্য তিনি জেনারেল আজিজ আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মালদ্বীপে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ জনের একটি সেনা মেডিকেল দল করোনা ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করছে এবং মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশিদের ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এবং মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স বক্তব্য রাখেন। জেনারেল আজিজ আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি অত্যন্ত চৌকস এবং পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনী কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শুধু দেশ নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন ইউএন মিশন এলাকার দেশে এবং কুয়েতের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ দল মালদ্বীপের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে বলে জেনারেল আজিজ আহমেদ মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার পরিদর্শক দলকে প্রয়োজনীয় পূর্ব মূল্যায়ন সম্পন্নের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপে প্রেরণ করতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
এছাড়াও সভায় দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন সামরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে মালদ্বীপ ডিফেন্স ফোর্স এর সংগঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে জেনারেল আজিজ আহমেদকে একটি ব্রিফিং প্রদান করা হয়।
মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স উভয়েই বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (এএফএমসি) এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ (এমআইএসটি) বিভিন্ন উচ্চতর সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মালদ্বীপের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণে প্রেরণ করার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতিবাচক সাড়া দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে দুদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি মনে করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মালদ্বীপ ডিফেন্স ফোর্সের সঙ্গে কাউন্টার টেররিজম বিষয়ক যৌথ অনুশীলন পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা করেন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারতের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় জানা যায় যে মালদ্বীপ সরকার তাদের “কাধহো” দ্বীপে উল্লেখযোগ্য সুবিধাদিসহ একটি এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং বর্তমান সফরে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্মাণসহায়তা প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে জেনারেল আজিজ আহমেদ মনে করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ হতে নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে বাংলাদেশের শিপিং লাইনসমূহ পূর্ণ সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম। তবে এ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা ও সফরের প্রয়োজন রয়েছে।
পরবর্তীতে জেনারেল আজিজ আহমেদ মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যান এবং মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর একটি ব্রিফিং প্রদান করা হয়।
সেনাবাহিনী প্রধানের এই পরিদর্শনে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ছাড়াও দুদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মালদ্বীপ সফরে জেনারেল আজিজ আহমেদ ৯ সদস্যের একটি সেনা পরিদর্শন দলের নেতৃত্ব দেন।