ডিএসই সূত্র জানায়,ব্যবসায় উন্নতির কারণে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের চার কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে লেনদেনের সম্মতি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এ ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জে পুনঃতালিকাভুক্তিতে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন শর্ত থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি কমিশনের নিয়মিত সভায় ওটিসির চার কোম্পানিকে মূল মার্কেটে লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে লেনদেনের সম্মতি পাওয়া ওটিসির চার কোম্পানি হচ্ছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেড।
সূত্র জানায়, উৎপাদন বন্ধ, লোকসানি, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, শেয়ার ডিম্যাট না করা, দীর্ঘ সময় লভ্যাংশ না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ২০০৯ ও ’১০ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এসব কোম্পানি তালিকাচ্যুত হয়েছিল। পুনঃতালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন, কমপ্লায়েন্স, করপোরেট গভর্ন্যান্সসহ বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং সিএসইতে তালিকাভুক্ত নয়। তাই এ কোম্পানিকে সিএসইতে নতুন করে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
সাধারণত যেসব কারণে কোনো কোম্পানি তালিকাচ্যুত হয়, পরবর্তীকালে সেসব শর্ত পূরণসাপেক্ষে ওটিসির কোনো কোম্পানি পুনঃতালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারে। পাশাপাশি পরিশোধিত মূলধন, এসইসির করপোরেট গভর্ন্যান্সসহ বিভিন্ন কমপ্লায়েন্সও পূরণ করতে হয়। ফলে ওটিসির কোম্পানিগুলোর জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে পুনঃতালিকাভুক্তি অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে মূল মার্কেটে ফেরার জন্য সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়ে থাকে কমিশন। এর আগে ওয়াটা কেমিক্যালস ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসকে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে লেনদেনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সম্মতি দেওয়া ওটিসির চার কোম্পানিকেও এমন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে মূল মার্কেটে এসব কোম্পানির লেনদেন শুরুর ক্ষেত্রে নতুন করে কিছু শর্তও আরোপ করেছে কমিশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যেসব কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের রয়েছে, তাদের পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এই ৫০ শতাংশ শেয়ার দুই বছরের লক-ইন থাকবে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারের অংশ ৫০ শতাংশে কীভাবে নামিয়ে আনবে, কোম্পানি তার একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা বিএসইসিতে জমা দেবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ওটিসির চার কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ পরিকল্পনা বিএসইসিতে জমা দিতে হবে।
সূত্র মতে, অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে যেসব কোম্পানি বোনাস শেয়ার এখনো বিতরণ করেনি, তাদের ট্রেড শুরু হওয়ার আগেই শেয়ারহোল্ডারদের বিও হিসাবে জমা দিতে হবে। এছাড়া যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম রয়েছে তাদের ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনাও বিএসইসিতে জমা দিতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে লেনদেন শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সব শেয়ার ডিম্যাট বা ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর করতে হবে। কোম্পানির সর্বশেষ দুটি অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন মূল মার্কেটে ট্রেড শুরুর আগেই কমিশনে জমা দিতে হবে। এছাড়া মূল মার্কেটে আসা এসব কোম্পানিতে দুজন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে।
এদিকে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওটিসি মার্কেটের কাগজ খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড ২০১০ সালে তালিকাচ্যুতির পর গত ৯ বছর ধরে মুনাফায় রয়েছে। ২০১৯-২০ হিসাববছরে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৫৬ পয়সায়। কোম্পানিটি এ সময় ৯ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৩ কোটি ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। কমিশনের দেওয়া শর্তানুসারে কোম্পানিটিকে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারণকৃত শেয়ারের কিছু অংশও অফলোড করতে হবে। মোট শেয়ারের ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তাদের হাতে। বর্তমানে এ কোম্পানির ৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পুঞ্জিভূত মুনাফা রয়েছে।
এছাড়াও ওটিসির স্বল্প মূলধনী আরেক কোম্পানি পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। বর্তমানে এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ কোম্পানিটি ২০১১ সাল থেকে মুনাফায় রয়েছে। ২০১৯-২০ হিসাববছরে কোম্পানির ইপিএস হচ্ছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। এ সময় ১১ শতাংশ নগদ ও ১১ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে।
ডিএসইর ওটিসি মার্কেটের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। কোম্পানিটি ২০১৭ সাল থেকে লভ্যাংশের ধারাবাহিকতায় রয়েছে। ২০১৮-১৯ হিসাববছরের জন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ২৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। সর্বশেষ হিসাব বছরে শেয়ার হোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস হচ্ছে ২ টাকা ৩৮ পয়সা।
ওটিসির যে চার কোম্পানি মূল বাজারে আসছে তার মধ্যে মুন্নু ফেব্রিকসের পরিশোধিত মূলধন সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১১৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর কোম্পানিটির এজিএম অনুষ্ঠিত হলেও লভ্যাংশের কোনো ইতিহাস ডিএসইর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। ২০২০-২১ হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে এর ইপিএস দেখানো হয়েছে মাত্র ১ পয়সা।