প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৮ জুন) গণভবনের সাথে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক’র সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পগুলো বিষয়ে বিস্তারিত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ; স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক; বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন; ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীগণ সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
একনেকে অনুমোদন পেল যেসব প্রকল্প
বরিশাল (দিনেরারপুল) লক্ষ্মীপাশা-দুমকি সড়কের পাণ্ডব-পায়রা নদীর উপর নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণ প্রকল্প মঙ্গলবার একনেক অনুমোদন দিয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বিভাগের আওতাধীন এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৩ কোটি ৫০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৮৬ কোটি ২৬ হাজার টাকা এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) ঋণ থেকে ৬৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ১৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ এপ্রিল ২০২১ হতে এপ্রিল ২০২৬ পর্যন্ত। এ প্রকল্পে মূল সেতু নির্মাণ ছাড়াও ২৫ মিটার কালর্ভাট নির্মাণ, ২৩ দশমিক ০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ, দুই কিমি নদী শাসন এবং পরামর্শক সেবা গ্রহণ। এ প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় মধুপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪০১) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২১ হতে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদী বন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ২৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার এ প্রকল্প সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২১ হতে জুন ২০২৩। প্রকল্পটি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন এবং উচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিপিএটিসি’র প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২০৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মুল বরাদ্দ ছিলো ৮৫৯ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও জুন ২০২০ হতে বাড়িয়ে জুন ২০২৩ করা হয়েছে।
এননেক অনুমোদিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আওতাভুক্ত বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স এর আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের বরাদ্দ ২১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। নিজস্ব অর্থায়নের এই প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২১ হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন ব্রাহ্মণগ্রাম-হাটপাঁচিল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ এবং বেতিল স্পার-১ ও এনায়েতপুর স্পার-২ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের মেয়াদ মার্চ ২০২০ হতে জুন ২০২৩ পর্যন্ত। এই প্রকল্পের ব্যয় ৬৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
একই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন ব্যারেজ, বুড়ি বাঁধ ও ভুল্লি বাঁধ সেচ প্রকল্পসমূহ পুনর্বাসন, নদীতীর সংরক্ষণ ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ২৯৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ জিওবি খাতের এ প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২১ হতে জুন ২০২৩ পর্যন্ত।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্প এলাকা দেশের ৮টি বিভাগের ৩৪টি জেলার ৫৭টি উপজেলা। জুলাই ২০২০ হতে জুন ২০২৪ মেয়াদকালের এই প্রকল্পের ব্যয় ৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আলু বীজ উৎপাদনের জন্যই মূলত এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ (প্রথম ৩০টি সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্প) প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। জানুয়ারি ২০২১ হতে জুন ২০২৩ মেয়াদকালের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০০ কোটি ২২ লাখ টাকা।
প্রকল্প অনুযায়ী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সদর, ফরিদপুর সদর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের মেলান্দহ, শেরপুরের শ্রীবর্দী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নোয়াখালী সদর, কুমিল্লা সদর, দিনাজপুর সদর ও বিরল, ঠাকুরগাঁও সদর, পঞ্চগড়ের বোদা, লালমনিরহাটের হাতিবান্দা, নওগাঁর শিবপুর, রানীনগর, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর ও নন্দীগ্রাম, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, সিলেটের কানাইঘাট, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, নড়াইল সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালি, পটুয়াখালী সদর ও কলাপাড়া, ভোলার চরফ্যাশনে সাইলো নির্মাণ হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) আওতাধীন বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। মার্চ ২০২১ হতে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মেয়াদকালের প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩০৪ ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫১২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭৯২ কোটি ৩ লাখ টাকা।