২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন আইসিএসবির কাউন্সিল সদস্য মোঃ শফিকুল আলম এলএল. বি, এফসিএমএ, এফসিএ, এসিএস। ইনস্টিটিউটের সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এফসিএস এবং মোঃ সেলিম রেজা এফসিএস, এফসিএ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইসিএসবি উক্ত প্রোগ্রামে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এবং বাজেটের বিভিন্ন দিক ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
আইসিএসবির কাউন্সিল সদস্য মোঃ শরীফ হাসান এলএল.বি, এফসিএস সূচনা বক্তব্য দেন এবং ইন্সটিটিউট সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোজাফফর আহমেদ এফসিএমএ, এফসিএস সকলকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য স্বাগত জানান।
মোঃ শফিকুল আলম বাজেট পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন এবং ২০২১-২২ এর বাজেটের বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, অর্থমন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামাল “জীবন-জীবিকার প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ” বিষয়কে প্রতিপাদ্য হিসেবে সামনে রেখে ২০২১ সালের জুনের ৩ তারিখ বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেটের মোট আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের পঞ্চাশতম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় আর্থিক পরিকল্পনা । কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ স্থির করা হয়েছে। আশা করা যায় যে এ সময়ে মুদ্রাস্ফীতির হার হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
স্বতন্ত্র ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম কর হ্রাস, হাসপাতালের জন্য ট্যাক্স ইনসেনটিভ, মোবাইল আর্থিক সেবার জন্য করের হার বৃদ্ধি, কাঁচামালের জন্য নগদ লেনদেনের সীমা বৃদ্ধি, ছয়টি আইটি পরিসেবার কর ছাড়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কর ছাড়, চারটি সম্ভাব্য করদাতা গোষ্ঠীর জন্য বাধ্যতামূলক ইটিআইএন বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন।
তিনি আরও বলেন, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য অ্যাডভান্স ট্যাক্স (এটি) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ কাস্টমসের জল সীমানা বিদ্যমান ১২ নটিক্যাল মাইল থেকে ২৪ নটিক্যাল মাইল প্রসারিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “কোভিড-১৯ টেস্ট কিট, পিপিই ইত্যাদিতে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড় দেওয়া হয়েছে।”
আইসিএসবি সদস্যরা সিএস প্র্যাকটিশনারদের আইটিপি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার এবং আরও সেক্টরে সেক্রেটারিয়াল অডিটের বিস্তৃতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এফসিএস মূল প্রবন্ধ উপস্থাপককে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু ইতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ করেন যেমন- জিডিপির স্থির হার, মুদ্রাস্ফীতি হার হ্রাস যা সরকারের পক্ষে সহজ কাজ নয়, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির কর্পোরেট কর হ্রাস যা পুঁজিবাজারকে উৎসাহিত করবে, সিমেন্ট কাঁচামালের জন্য প্রস্তাবিত কর হ্রাস সিমেন্টের দাম কমাবে, শ্রমিক মুনাফার অংশীদারিত্ব তহবিল এ ট্যাক্স না থাকা এবং যারা শিল্প উৎপাদন করছে তাদের শিল্পের কাঁচামালগুলিতে এআইটি ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বাজেটের উপর কিছু পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করেন যেমন মোবাইল আর্থিক পরিসেবাগুলিতে কর বৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত এমএফএসের খরচ বাড়িয়ে তুলবে। ২ লাখ টাকার বেশি টাকার ডাক সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ইটিআইএনের প্রয়োজনীয়তা ছোট বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে এবং বেসরকারি খাতের চাকুরিজীবিদের চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর পেনশন সঞ্চয় পত্রে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা।
মোঃ সেলিম রেজা এফসিএস, এফসিএ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইসিএসবি বলেন, যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে যা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বাতিল করা উচিৎ। তিনি আরও বলেন যে, মোট ৮০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দেওয়ার আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং এক বছরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা উচিত। এলডিসি থেকে উত্তোরনের বিষয়টি মাথায় রেখে যথাযথ পরিমাণে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে বাজেটে প্রতিফলিত করা উচিত। অনলাইন এবং ই-বাণিজ্য সংস্থাগুলিকে সম্ভাব্য বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা করার জন্যও তিনি সরকারকে পরামর্শ দেন।
ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও অধিবেশন চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমেদ বাজেটের গভরনেন্স সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখার এবং এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বাজেট প্রস্তুতি, অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা এবং বাস্তবায়নের বাধাসমূহ চিহ্নিতকরণে প্রফেশনালদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান যা কিনা সরকারকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে সহায়তা করবে। তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ যে কমপ্লাইয়েন্স অডিট এর কাজ করছেন সে ব্যাপারে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সরকারের কাছে নিবেদন করেন যে, যাদের ফিক্সড টার্ন ওভার আছে সে সমস্ত জায়গায় কমপ্লাইয়েন্স অডিট এর বিস্তৃতি বাড়ানোর জন্য।
তিনি আরও বলেন যে ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতকে পুনরুদ্ধারের মতো নীতিগত বিষয়গুলোর ব্যাপারে অবিলম্বে মনোযোগ দেওয়ার মতো তাৎক্ষণিক জাতীয় ইস্যুতে বাজেট নীরব। নাগরিকদের মধ্যে কোভিড ভ্যাকসিন শেষ করার তারিখ নির্ধারণের ব্যাপারেও বাজেট নীরব।
প্রাণবন্ত ভার্চুয়াল প্রোগ্রামটি একটি ইন্টারেক্টিভ প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল যেখানে প্রবন্ধ উপস্থাপক, আলোচকবৃন্দ এবং প্রোগ্রামের সভাপতি অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন তালিকাভুক্ত সংস্থা, কর্পোরেট নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনস্টিটিউটের অনেক সদস্য এবং বিভিন্ন পেশাদারগণ, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।