করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ৫ লাখ ৩২ হাজার ২৭৯ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১১ জন চিকিৎসাধীন এবং ১৯ হাজার ৩৫৭ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। এ হিসাবে প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগী মধ্যবর্তী অবস্থায় রয়েছেন এবং ৫ শতাংশ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৪৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ হিসাবে করোনায় আক্রান্ত প্রায় ৮৪ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১৬ শতাংশ মানুষ।
ওয়ার্ল্ডওমিটার বলছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৯ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।
আর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৯৯ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৫ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ২৪ হাজার ৮৮ জন।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য সামনে এনে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। কেবল বৃহস্পতিবারই ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ ভাইরাসে মৃ্ত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যে ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার ওপরে। বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে বেশি করোনা রোগী এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এখন ‘করোনাভাইরাস পজিটিভ’ রোগীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ৬৫৩ জন।
আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে করোনার সূতিকাগার চীন এবং প্রাদুর্ভাবের নতুন আঁতুড়ঘর ইতালিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চীনে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৭০০ জন। আর ইতালিতে ৮০ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। এর পর এই ভাইরাস বিশ্বের ২০০ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩১ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। মারা গেছেন ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। দেশটিতে ৮ হাজার ২১৫ জন মারা গেছেন। এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৬৫ জন মারা গেছেন স্পেনে। চীনে মারা গেছেন ৩ হাজার ২৯১ জন। ইরানে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২৩৪ জনের। ফ্রান্সে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৯৮ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৯০ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭১ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯০ জন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে মার্কিন সিনেট দুই ট্রিলিয়ন ডলারের ত্রাণ সহায়তা বিল পাস করেছে। আইনে পরিণত হলে এটিই হবে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রণোদনা।
হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন শঙ্কাও রয়েছে। তাই প্রতিষেধক তৈরি এবং দ্রুত রোগ নির্ণয়ের ওপর আমরা জোর দিতে চাইছি। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরির কাজও চলছে।’
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের একটি হাসপাতালের আইসিইউ থেকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪০ বছর বয়সী মার্ক ম্যাক ক্লার্গ। তিনি বলেন, ‘আপনাকে হত্যা করতে চায় করোনাভাইরাস। আপনার ফুসফুস পুরোপুরিভাবে শেষ করে দিতে চায় করোনাভাইরাস। এটি শুধুই ঠাণ্ডা-কাশি, এমনটি আপনি একমুহূর্তের জন্যও ভাবলে ভুল করবেন। আপনি যদি বাঁচতে চান, তা হলে অবশ্যই আপনাকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’
অন্যদিকে গরিব কল্যাণ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি রুপির প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ভারত। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, দেশটির ৮০ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে বিনামূল্যে পাঁচ কেজি চাল অথবা গম পেতেন। কিন্তু এই ঘোষণার পর আগামী তিন মাস অতিরিক্ত আরও পাঁচ কেজি চাল অথবা গম পাবেন তারা। সেই সঙ্গে দেয়া হবে অতিরিক্ত এক কেজি ডালও। বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।