একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার (২০ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতে পুলিশের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী।
গত ১৩ জুন বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের ঘটনায় মামলা বাতিল এবং বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন।
পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের ওপর আজ (২০ জুন) শুনানি নিয়ে আগের পুরো রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেন চেম্বার আদালত।
১৩ জুনের হাইকোর্টের রায় নিয়ে ব্যারিস্টার হালিম জানিয়েছিলেন, চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও জেলে প্রেরণের ঘটনায় হাইকোর্ট ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো হলো-
১. চার শিশুকে গ্রেফতার ও থানা হেফাজতে আটক রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
২. চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত।
৩. বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা।
৪. সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা।
৫. চার শিশুকে আটক করে প্রিজনভ্যানে করে আনা চার পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে।
৬. বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।
৭. শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে প্রত্যেক থানায় সার্কুলেট করতে বলা হয়েছে।
৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত বছরের ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ অক্টোবর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ। এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়।
এই সংবাদ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের নজরে এলে তাঁরা ৮ অক্টোবর রাতে ভার্চুয়ালি আদালত বসান। সেই আদালতে ওই ৪ শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশাল আদালতকে নির্দেশ দিয়ে রাতেই শিশুদের এসি মাইক্রোবাসে করে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই আদেশ অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের বিচারক চার শিশুকে জামিন দেন। এরপর ১১ অক্টোবর চার শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা স্থগিত করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল জারি করেন আদালত।