সোমবার (২৮ জুন) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
পরে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, আদেশে হাইকোর্ট পিপলস লিজিং পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার কথা জানিয়েছেন। তবে এর বিস্তরিত ঘোষণা দেননি। আদালতের লিখিত আদেশ প্রকাশ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এর আগে গত সপ্তাহে পিপলস লিজিং পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশনা চেয়ে এর ২০১ জন আমানতকারী হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর আলোকে আজ হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেন।
আদালতে পিপলস লিজিং-এর ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের করা আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসানুল করিম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব-উল আলম। আর পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়কের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।
উল্লেখ, আর্থিক খাতের বিতর্কিত মুখ প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারসহ পরিচালকদের ব্যাপক লুটতরাজের কারণে পিপলস লিজিং একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানটি তার আমানতকারীদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগ হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং অবসায়ন তথা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেন আদালত। তবে এখন পর্যন্ত কেউ জমানো টাকা ফেরত পাননি। কষ্টে জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে আমানতকারীদের জমা আছে ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত রয়েছে সাড়ে সাতশ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই নানা অনিয়মের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এসব অর্থ ফেরত আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানতকারীদের একটি অংশ তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।
তবে আমানতকারীদের অন্য একটি অংশ মনে করছেন, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রির মাধ্যমেও পুরো আমানত ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নাই, তাই প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন না করে এটিকে পুনরায় চালু করে ঋণ আদায় এবং অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হতে পারে। এই মতের আমানতকারীদের একটি অংশই গত সপ্তাহে হাইকোর্টে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে আসে, পিপলস লিজিং থেকে বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই জালিয়াতির মাধ্যমে সাবেক পরিচালকরা তুলে নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেন দেশ থেকে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। পিপলস লিজিংসহ চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পি কে হালদার মালিকানা নেওয়ার আগে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পাঁচ পরিচালককে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপসারিতদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ১১৬ কোটি টাকা, সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন মিয়া ১০৭ কোটি টাকা এবং শামসুল আলামিনের পরিবারের তিন সদস্য আরেফিন সামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন ও হুমায়রা আলামিন ২৯৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে তখন দুদকে প্রতিবেদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অবসায়ক নিয়োগের পরদিন ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই এসব ব্যক্তিসহ ১১ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। অন্যরা হলেন- পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাউথ বাংলা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইল ও বিশ্বজিত কুমার রায়। এছাড়া সাবেক তিন কর্মকর্তা হলেন- কবির মোস্তাক আহমেদ, নিপেন্দ্র চন্দ্র পন্ডিত ও মো. শহিদুল হক। পরে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি পিপলস লিজিংয়ের সাবেক ৪৬ পরিচালক ও ১৭ কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দেন উচ্চ আদালত।