দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের (এনএইচসি) উপমন্ত্রী জেং ইক্সিন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এমন কোনো অনুসন্ধান পরিকল্পনাকে সমর্থন করেতে পারি না যা মানবিক কাণ্ডজ্ঞানের জন্য অসম্মানজনক ও বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে।’
চীনের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী আরও বলেন, চীনের গবেষণাগারে এই ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছিল এবং কর্মীদের অসাবধানতার কারণে এটি বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে- পশ্চিমা বিশ্বের প্রচার করা এই ‘গুজবে’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আস্থা রেখেছে- এমন তথ্য জানার পর তিনি ‘হতাশা’ বোধ করছেন।
গত ১৬ জুলাই এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, ‘করোনার উৎস অনুসন্ধান বিষয়ক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।’
এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘চীনে দ্বিতীয় দফায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রয়োজন বোধ করছে ডব্লিউএইচও। এ দফায় চীনের উহান শহরসহ যেসব অঞ্চলে জীবাণু গবেষণা সংক্রান্ত ল্যাবরেটরিসমূহ আছে, সেগুলো পরিদর্শন করা হবে।’
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডব্লিউএইচওর যে প্রতিনিধি দলটি চীন সফরে গিয়েছিল, সেই দলের সদস্যদের কাছে কিছু তথ্য গোপন করা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন জেং ইক্সিন। তবে এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেসব তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জেং ইক্সিন বলেন, ‘আমারা আশা করব করোনাভাইরাস সম্পর্কে চীনের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শসমূহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে এই ভাইরাসের উৎস সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বৈজ্ঞানিক বিষয় হিসেবে দেখবে।’
জানুয়ারি মাসে ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতা করতে চীনের যে বিশেষজ্ঞ দলটি তাদের সঙ্গে ছিলেন, সেই দলের প্রধান লিয়াং ওয়ানিয়ান বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার যে তত্ত্ব ছাড়নো হয়েছে – তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এই তত্ত্বের সত্যতা অনুসন্ধানও একপ্রকার পণ্ডশ্রম।’
‘আর যদি সত্যিই ল্যাব থেকে এটি ছড়িয়ে থাকে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বাস করে থাকে, সেক্ষেত্রে শুধু চীনকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে কেন? অন্যান্য দেশের গবেষণাগার থেকেও তো এটি ছড়িয়ে থাকতে পারে।’
মহামারি শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলকে সফরের অনুমতি দেয় চীনের ক্ষমতাসীন সরকার। সেই দল চীনে পর্যবেক্ষণ শেষে চলতি বছর মার্চে করোনার উৎস সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনও জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদুড় জাতীয় প্রাণী থেকেই মানবদেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে এবং গবেষণাগার বা ল্যাব থেকে এ রোগটি ছড়িয়েছে- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মার্চে এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞরা ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনকে ‘অসম্পূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেন- এই ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে যে ব্যাপক ও গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন ছিল- তার ছাপ নেই ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে।
১৬ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, ‘করোনার উৎস সম্পর্কে বর্তমানে যেসব তত্ত্ব প্রচলিত আছে, সেসবের কোনোটিকেই এই মুহূর্তে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে, গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে- এই ধারণাটি বাতিল করার সময় এখনও আসেনি।’
সূত্র : রয়টার্স