আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার পরিসংখ্যান অনুসারে, এ পর্যন্ত আফ্রিকার মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ করে করোনা টিকা পেয়েছেন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ধনী অঞ্চলে এর হার প্রায় ৫০ শতাংশ।
এছাড়া বিশ্বব্যাংকের সূচকে উচ্চআয়ের দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জন মানুষ টিকা পেয়েছেন প্রায় ১০১ ডোজ করে। চলতি সপ্তাহেই তারা ১০০ ডোজের মাইলফলক পার হয়েছে। সেই তুলনায় তালিকার তলানিতে থাকা নিম্নআয়ের ২৯টি দেশে এখনো এর হার পড়ে রয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশে।
দরিদ্রদের এমন দুর্দশায় রেখে ধনী দেশগুলো করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে স্থগিতাদেশ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বুধবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে জনগণকে রক্ষায় সরকারগুলোর উদ্বেগ আমি বুঝতে পারি। কিন্তু যে দেশগুলো বৈশ্বিক টিকা সরবরাহের বড় অংশ ইতোমধ্যে ব্যবহার করে ফেলেছে, তারা আরও ব্যবহার করা আমরা মেনে নিতে পারি না।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ নিজেই তৃতীয় ডোজ টিকা নিয়ে ষাটোর্ধ্বদের জন্য বুস্টার ডোজ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। করোনা থেকে অধিক সুরক্ষার লক্ষ্যে আগামী মাস থেকে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করবে জার্মানিও।
এ অবস্থায় ডব্লিউএইচও প্রধানের এই বক্তব্য দরিদ্র দেশগুলোকে আশা দেখালেও তাতে খুব একটা সাড়া দেয়ার লক্ষণ নেই পশ্চিমা বিশ্বের। যুক্তরাষ্ট্র তো ইতোমধ্যে গ্যাব্রিয়েসুসের প্রস্তাব নাকোচ করে দিয়েছে। বুধবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এটিকে ‘ভুল বিকল্প’ উল্লেখ করে দাবি করেছেন, একসঙ্গে দুটি কাজই করা সম্ভব। অর্থাৎ নিজেরা বুস্টার ডোজ নেয়ার পাশাপাশি অন্য দেশগুলোতে টিকাদানও অব্যাহত রাখা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১১ কোটির বেশি ডোজ বিতরণ করেছে উল্লেখ করে এ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, অন্য দেশগুলো মিলে যা দিয়েছে এটি তার চেয়েও বেশি। প্রত্যেক মার্কিনির টিকা নিশ্চিতের জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। এফডিএ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, জনগণের একাংশের জন্য বুস্টার ডোজ লাগবে, তাহলে তার জন্যেও আমাদের যথেষ্ট টিকা থাকবে।
বুস্টার ডোজে স্থগিতাদেশের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে মনে করি, এটি ভুল বিকল্প এবং আমরা উভয়ই করতে পারি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধু নিজেরা টিকা নিয়েই করোনা থেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকা সম্ভব নয়। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে সামান্য সংক্রমণই গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য সারাবিশ্বে সমানভাবে টিকা ব্যবহার জরুরি।
ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞ ক্যাথেরিন ও’ব্রায়েন বলেন, দুই ডোজ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সেসব লোকের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে যারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, গুরুতর রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকি যাদের সর্বোচ্চ। সূত্র: আল-জাজিরা