তাইওয়ানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সাই ইং ওয়েনের ফেসবুক পেজে টিকার ডোজ নেওয়ার সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। ডোজ নেওয়ার আগে সাংবাদিকরা তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি ‘নার্ভাস’ বা কোনো প্রকার মানসিক দ্বিধা বোধ করছেন কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, আমি নার্ভাস বোধ করছি না।
পরে নিজের ফেসবুক পেজে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘টিকার ডোজ নেওয়ার সময় বা তার পর আমি কোনো ব্যাথা বোধ করিনি, শারীরিক অবস্থা ভালো আছে এবং টিকা নেওয়ার পর আমি আমার প্রতিদিনের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করেছি।’
তাইওয়ানভিত্তিক ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি মেডিজেন ভ্যাকসিন বায়োলজিকস কর্পোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এর যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয়েছে করোনা টিকা মেডিজেন। ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার মতো মেডিজেনও রিকম্বিনেন্ট প্রোটিনসমৃদ্ধ করোনা টিকা।
করোনা টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে প্রধানত তিন ধরনের প্রযুক্তি বা পদ্ধতি ব্যবহার করছে টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ। প্রথম পদ্ধতি অনুসারে টিকার মূল উপাদান হিসেবে এমন একটি রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহে প্রবেশের পর দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা অ্যান্টিবডিকে বিশেষভাবে শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত করে তোলে। ফলে করোনাভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে সেটিকে সহজেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয় অ্যান্টিবডি।
এই প্রযুক্তিতে প্রস্তুতকৃত টিকাগুলোকে বলা হয় রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন বেইজড ভ্যাকসিন। করোনা টিকা ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও মেডিজেন এই ফর্মুলায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি বা প্রযুক্তি অনুসারে, বৈজ্ঞানিকভাবে রূপান্তরিত (জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড) করোনাভাইরাসকে টিকার মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রূপান্তরিত ভাইরাসের নমুনা দেহে থেকে যায় এবং অনুপ্রবেশকারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেটি ধ্বংস করে। চীনের করোনা টিকা সিনোফার্ম, ভারতের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন এই এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
তৃতীয় ধরনের প্রযুক্তি অনুসারে, করোনাভাইরাসের সমধর্মী অন্য কোনো ভাইরাসকে (অ্যাডিনোভাইরাস) বৈজ্ঞানিকভাবে রূপান্তরিত ও বংশবিস্তারে অক্ষম করে তা টিকার মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। করোনা টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, স্পুটনিক ৫ ও জনসন এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
মেডিজেন দুই ডোজের করোনা টিকা। নিয়ম অনুযায়ী, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়।
গত জুলাই মাসের শেষ দিকে জরুরি প্রয়োজনে মেডিজেনকে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে তাইওয়ানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই টিকার বিভিন্ন স্তরের ট্রায়াল এবং করোনার বিরুদ্ধে মেডিজেনের কার্যকারিতা বিষয়ক তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
তবে তাইওয়ানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি গবেষণায় জানা গেছে, করোনাভাইরাস এবং এ রোগের বিরুদ্ধে মেডিজেনের কার্যকারিতা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সমপর্যায়ের।
কর্মকর্তারা আরও জানান, তাইওয়ানের সাধারণ জনগণকে মেডিজেনের ডোজ নিতে উৎসাহিত করতেই প্রেসিডেন্ট সোমবার এই টিকার ডোজ নিয়েছেন এবং গণটিকাদান কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য সরকার প্রাথমিকভাবে ইতোমধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকা কিনতে মেডিজেনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেডিজেন ভ্যাকসিন বায়োলজিকস কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
পৃথক এক বিবৃতিতে মেডিজেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের প্রায় ৭ লাখ মানুষ এর মধ্যেই মেডিজেনের ডোজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। গত বছর ডিসেম্বর থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে তাইওয়ান। এতদিন এই কর্মসূচিতে ব্যবহার হয়েছে মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, তাইওয়ানে মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন। টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন ৫ শতাংশ জনগণ।
সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা।