অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, “তিনি প্রাণভিক্ষার একটি আবেদন দিয়েছেন। আমরা সন্ধ্যার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় আছি। আদেশ যাই হোক, আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি।”
রাতে বঙ্গভবনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, প্রাণভিক্ষার ওই আবেদন পৌঁছানোর পর তা খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপ্রধান।
জজ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় এসেছিল ২০০১ সালে। এরপর ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে চূড়ান্ত রায় আসে।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময় বহু বছর আগেই পেরিয়ে যাওয়ায় আবদুল মাজেদ সে সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন না বলে এর আগে জানিয়েছিলেন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
এর ফলে ফাঁসির দড়ি এড়ানোর একমাত্র সুযোগ বাকি ছিল সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। সেই চেষ্টাই করেন বিচার এড়িয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে পালিয়ে থাকা মাজেদ।
এখন তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের সামনে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকছে না। তবে দণ্ড কার্যকর করার আগে সাধারণত পরিবারের সদস্যদের শেষবার দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
মাজেদের স্ত্রী সালেহা বেগম, চার মেয়ে ও এক ছেলে ঢাকা সেনানিবাসের এক নম্বর রোডের একটি বাসায় থাকেন।
যোগাযোগ করা হলে সালেহা বেগম বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ তখনও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। প্রাণভিক্ষার বিষয়টিও তারা টিভি দেখে জেনেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলা হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এ মামলার রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাই কোর্টের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে পাঁচ আসামি রিভিউ আবেদন করেন।
তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আবদুল মাজেদ ছাড়াও খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান সে সময় পলাতক ছিলেন।
মঙ্গলবার ভোরে মাজেদকে গ্রেপ্তার করার পর আদালতের মাধ্যমে তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর বুধবার তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।
সেই পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী আসামি মাজেদকে তা পড়ে শোনায়। এরপর রাতে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন করার খবর আসে।