গত ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে ৫ হাজার কোটি টাকার যে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত যে নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে কর্মকর্তারা বেতন পাবেন কি না, তা উল্লেখ ছিল না।
বিষয়টি পরিষ্কার করতেই বুধবার আরেকটি সার্কুলার জারি করা হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “শুধু শ্রমিক-কর্মচারীরাই এই তহবিল থেকে বেতন-ভাতা পাবেন। কর্মকর্তাদের বেতন-ভোতা কারখানার মালিককেই দিতে হবে।”
গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার আগে ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে রপ্তানি খাতের জন্য প্রণোদনা তহবিলের নীতিমালা বলা হয়েছে, তহবিলের টাকা গার্মেন্ট মালিকরা পাবেন ঋণ হিসেবে। যেসব কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করছেন, তারাই এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।
এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোকে। তবে সময় মতো কিস্তির অর্থ পরিশোধ না করলে বকেয়া কিস্তির উপর দণ্ড সুধ আরোপ হবে।
বুধবার জারি করা ‘নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সচল রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান’ শীর্ষক সার্কলারে বলা হয়েছে-
>> যেসব শ্রমিক-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বিশেষ বিবেচনায় তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে বেতন/ভাতা প্রদান করা যাবে।
>> ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক শিল্প প্রতিষ্ঠান যে ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করে থাকে সে ব্যাংকের নিকট উক্ত ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবে। কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা প্রদান করলে সেক্ষেত্রে উক্ত বেতন/ভাতার বিপরীতে ঋণের জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাংকের নিকট আবেদন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সমন্বয়ে সিন্ডিকেটেড ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবে।
>> ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ আবেদনের সাথে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন হতে কর্তনযোগ্য আয়কর ও ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা পৃথকভাবে উল্লেখসহ মোট বেতন/ভাতা হতে আয়কর ও ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট বেতন/ভাতা উল্লেখ করবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আয়কর সংক্রান্ত ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে ঋণ আবেদনের সাথে ব্যাংকে দাখিল করবে।
>> শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক কর্তনযোগ্য আয়কর ও ভবিষ্যৎ তহবিলের চাঁদা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট বেতন/ভাতা শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাব বা এমএফএস হিসাবে সরাসরি স্থানান্তর করবে। পরবতীতে ব্যাংক নিজ উদ্যোগের্ কর্তনকৃত আয়কর নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে জমা করে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে চালানের কপি সরবরাহ করবে।
>> এ তহবিল হতে কোনভাবেই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা প্রদান করা যাবে না।