এর মধ্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার সরকারি প্রাক্কলনের অর্ধেকেরও বেশি কমে ২-৩ শতাংশের মধ্যে নেমে আসতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারীর চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রোববার প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস’ প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এই মহামারীর পরিস্থিতির বিস্তার ও স্থায়িত্বের উপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি নির্ভর করবে। আপাতত গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের সরকারি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এই অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ২ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছিলেন।
তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, প্রবৃদ্ধির হার শুধু এবার কমে থেমে থাকবে না, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে তা ১ দশমিক ২ শতাংশ-২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু পরের ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ২ দশমিক ২ শতাংশ-৩ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
সংস্থাটি মনে করে, এই মহামারী উৎপাদন খাতসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ উৎপাদিত পণ্যের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বেকারত্বের ঝুঁকি তৈরি করবে এবং দারিদ্র্য বাড়াবে।
নগরের দরিদ্ররা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, গ্রামীণ এলাকায়ও দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। দেশজুড়ে সবকিছু বন্ধ থাকায় ব্যক্তিপর্যায়ে ভোগ কমে যাবে। মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের আশা থাকলেও বিশেষ করে দেশে কোভিড-১৯-এর বিস্তার ও আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা থেকে নিম্নমুখী ঝুঁকি বিরাজমান রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন এক বিবৃতিতে বলেন, সংকটের মেয়াদ ও তা প্রশমনে গৃহীত পদক্ষের ওপর নির্ভর করছে মহামারি কতটা দীর্ঘায়িত হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নির্দেশনা, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচি হাতে নিয়ে বাংলাদেশ সরকার দ্রুতই সংকট মোকাবিলায় সাড়া দিয়েছে।
“কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ও জনগণকে রক্ষায় বিশ্বব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে ১০ কোটি ডলার দিয়েছে । মহামারী নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বাংলাদেশের ঘুড়ে দাঁড়ানোতে সহায়তা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ শতাংশ-২ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক, যা চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। অথচ ছয়মাস আগেও এ প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এই মহামারীর প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই পড়বে। আটটি দেশের মধ্যে চারটি দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যেতে পারে।
এগুলো হলো- আফগানিস্তান (মাইনাস ৫ দশমিক ৯ থেকে মাইনাস ৩ দশমিক ৮ শতাংশ), মালদ্বীপ (মাইনাস ১৩ শতাংশ থেকে মাইনাস সাড়ে ৮ শতাংশ), পাকিস্তান (মাইনাস ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে মাইনাস ১ দশমিক ৩ শতাংশ) ও শ্রীলঙ্কা (মাইনাস ৩ শতাংশ থেকে মাইনাস দশমিক ৫ শতাংশ)।
এছাড়া চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ-৫ শতাংশ, নেপালের ১ দশমিক ৫ শতাংশ-২ দশমিক ৮ শতাংশ ও ভুটানে ২ দশমিক ২ শতাংশ-২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে নিজ দেশের জনগণকে সুরক্ষা দেওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ দরিদ্র মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকেন।