সেপ্টেম্বরের মধ্যে করোনার টিকা আনবে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাঞ্জেস কোম্পানি। এ বছরই প্রায় ১০ লাখ মানুষকে এ প্রতিষেধক দেবে তারা। অ্যাঞ্জেসের স্বত্বাধিকারী এবং ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিউচি মরিশিতা ‘জিকিউ জাপান’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। অ্যাঞ্জেস তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরেছে। গত ৫ মার্চ থেকে নভেল করোনা প্রতিরোধে ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাঞ্জেস। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভ্যাকসিনটি তৈরির কাজ শেষ হয় বলে গত ২৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় তারা। ওই সময় বলা হয়েছিল, প্রাণীর ওপর ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে গত ১৪ এপ্রিল আরেক বিবৃতিতে অ্যাঞ্জেস জানায়, তারা আগামী জুলাইয়ের মধ্যে হিউম্যান ট্রায়াল শেষ করতে চায়। যারা ইতিমধ্যে ওসাকা সিটি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য চুক্তি করেছে তাদের এ ট্রায়াল দেওয়া হবে। চুক্তিতে অংশ নেন ওসাকার গভর্নর হিরোফুমি ইয়োশিমুরা ও মেয়র ইচুরো মাসুই। জিকিউ জাপান পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক রিউচি মরিশিতা বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা প্রাণীর ওপর ট্রায়ালে টিকাটি প্রয়োগ করেছি। এই ভ্যাকসিন কোষের ভিতর কী পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে তাও নিশ্চিত হয়েছি। এটি সত্যি আশার কথা যে, আমরা সেপ্টেম্বরে হিউম্যান ট্রায়াল শেষ করে এ বছরের মধ্যেই ১০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। আর কেউ যদি আক্রান্ত হনও তাহলে চিকিৎসকরা যেন উপসর্গ দেখে ওষুধ দেন। নভেল করোনাভাইরাসটি যদি মিউটেটেড হয়, তারপরও এই ভ্যাকসিনটি কার্যকর কিনা এমন প্রশ্নে অধ্যাপক মরিশিতা বলেন, সার্স ও মার্স ভাইরাসের স্পাইক (এস) প্রোটিনের সঙ্গে নতুন করোনাভাইরাসের স্পাইকের মিল রয়েছে। এদের জেনেটিক সিকুয়েন্সে মিল থাকায় আমি মনে করি মিউটেটেড নভেল করোনাভাইরাসেও ভ্যাকসিনটি সফল হবে। ভ্যাকসিন তৈরি হতে এত সময় লাগছে কেন? এমন প্রশ্নে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল জিন থেরাপির এই অধ্যাপক আরও বলেন, আসলে জাপানে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মিলিটারিতে বায়োটেররিজম ঠেকাতে বেশ ভালো প্রযুক্তি রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। আমাদের ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ সুবিধা কম থাকায় আমরা কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা যদি নভেল করোনাভাইরাসের ওষুধ তৈরিও করে ফেলি তারপরও অনেকেই এ ভাইরাসে আবার আক্রান্ত হচ্ছে। আর তা থেকে মুক্তি পেতে হলে ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করা জরুরি। কভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাস আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)। এই ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন (এস) থেকে তৈরি করা হয় এই ডিএনএ ভ্যাকসিন। মূলত এটি এক ধরনের জীবাণু (অ্যান্টিজেন) যা দেহে প্রবেশ করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আর যখন করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তখন এই অ্যান্টিবডি তা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। জাপানের ওষুধ কোম্পানি তাকারা বায়ো এই ভ্যাকসিন বাজারজাত করার দায়িত্ব নিয়েছে।
আর্কাইভ থেকে