চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে রিয়েল এস্টেট খাত। কারণ এই খাতের সঙ্গে অনেকগুলো শিল্প জড়িত। আবাসন শিল্পে ৩৫ লাখ নাগরিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। এছাড়া দৈনিক ভিত্তিতে কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করে এখানে। আবাসন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যান্য খাতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তাই আবাসন খাতের ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করা খুব জরুরি।
করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্যাকেজ থেকে রিহ্যাবের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। ২০১১ সালে আবাসন খাতে যে সংকট তৈরি হয় সেটা দূর করতে প্রায় কয়েক বছর লেগে যায়। খাতটি সংকট কাটিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই করোনার আঘাত শুরু হয়েছে। বর্তমান সময়ে যে সংকট তা থেকে রক্ষায় এখনই কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও আবাসন ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান ঋণের সুদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ ও সহজ শর্তে পুনঃতফসিল করা খুবই জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনে আবাসন শিল্পে ২০০৭-০৮ সালের ন্যয় হাউজিং রি-ফিন্যান্সিং স্কিম পুনঃপ্রচলন অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি রিহ্যাব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই এবং এনবিআরের সমন্বয়ে গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় বাংলাদেশের আবাসন শিল্পের সমস্যা সমাধান এবং সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চায় রিহ্যাব।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, আবাসন খাতের সঙ্গে ২৫০টি সেক্টর জড়িত। করোনার প্রভাবে ইতিমধ্যে সব সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আবাসন খাতের ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ বেশ কিছু সুবিধা চেয়েছি আমরা। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণায়ে পাঠিয়েছি।
ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্যাকেজের আকার ও ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে আবাসান খাত নেই। দেশের ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঋণ সুবিধার সুদেরহার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।
প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক এই তহবিলের ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তবে পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে আগ্রহী ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একটি অংশহণমূলক চুক্তি সাম্পাদন করতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে এই ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। প্রণোদনামূলক ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে কৃষি খাতের জন্য। গ্রাহক পর্যায়ে সে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৪ শতাংশ। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করবে।