করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির শুক্রবার রাতে হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মৃতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৮।
এই সময় পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ লাখ ৪ হাজার ৫১১ জন। আর এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৫ জন।
এই করোনাভাইরাসের উৎস্থল চীনের উহানে মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনার আগের সংখ্যা পরিবর্তিত হওয়ায় একদিনে মৃত্যুর তালিকায় যোগ হয় ১ হাজার ২৯০ জন।
এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখনও নেই টিকা, নেই নির্দিষ্ট কোনো ওষুধও। ফলে থমকে যাওয়া বিশ্বে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে, যা কতদূর যাবে তা এখনও অনিশ্চিত।
ইউরোপে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির পর এখন যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত নভেল করোনাভাইরাসে; এরপর আফ্রিকা এই মহামারীর নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে ডব্লিউএইচও আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল।
সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা; তারপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ৩ মার্চ বলেছিল, মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশে যেতে পারে।
কিন্তু মৃতের সংখ্যা যখন লাখ ছাড়াল, তখন দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ মৃত্যুর করাল গ্রাসে পড়ছে।
আর মৃতের সংখ্যা যখন দেড় লাখ ছাড়াল, তখন দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ মারা যাচ্ছে।
মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছে কোভিড-১৯ রোগে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইতালির চেয়ে এই সংখ্যা ১০ হাজার বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। ইতালিতে ও স্পেনে এই এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার করে।
যে সব দেশে সর্বাধিক মৃত্যু
>> যুক্তরাষ্ট্র: মৃত্যু ৩২ হাজার ৯১৭; আক্রান্ত ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১; মৃত্যুর হার ৪.৯ শতাংশ।
>> ইতালি: মৃত্যু ২২ হাজার ১৭০; আক্রান্ত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪১; মৃত্যুর হার ১৩.১ শতাংশ।
>> স্পেন: মৃত্যু ১৯ হাজার ৩১৫; আক্রান্ত ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৮; মৃত্যুর হার ১০.৪ শতাংশ।
>> ফ্রান্স: মৃত্যু ১৭ হাজার ৯৪১; আক্রান্ত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯১; মৃত্যুর হার ১২.২ শতাংশ।
>> যুক্তরাজ্য: মৃত্যু ১৩ হাজার ৭৫৯; আক্রান্ত ১ লাখ ৪ হাজার ১৪৫; মৃত্যুর হার ১৩.২ শতাংশ।
>> ইরান: মৃত্যু ৪ হাজার ৮৬৯; আক্রান্ত ৭৭ হাজার ৯৯৫; মৃত্যুর হার ৬.২ শতাংশ।
>> বেলজিয়াম: মৃত্যু ৪ হাজার ৮৫৭; আক্রান্ত ৩৪ হাজার ৮০৯; মৃত্যুর হার ১৪ শতাংশ।
>> চীন: মৃত্যু ৪ হাজার ৬৩২; আক্রান্ত ৮৩ হাজার ৭৬০; মৃত্যুর হার ৫.৫ শতাংশ।
>> জার্মানি: মৃত্যু ৪ হাজার ৫২; আক্রান্ত ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯৮; মৃত্যুর হার ২.৯ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যু
>> ভারত: মৃত্যু ৪৪৮; আক্রান্ত ১৩ হাজার ৪৩০; মৃত্যুর হার ৩.৩ শতাংশ।
>> পাকিস্তান: মৃত্যু: ১২৮; আক্রান্ত ৬ হাজার ৯১৯; মৃত্যুর হার ১.৮ শতাংশ।
>> বাংলাদেশ: মৃত্যু ৭৫; আক্রান্ত ১ হাজার ৮৩৮; মৃত্যুর হার ৪.০ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়। তার প্রায় এক মাস পর প্রথম মৃত্যুটি চীনে ঘটেছিল ১১ জানুয়ারি।
চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যুটি ঘটেছিল প্রায় এক মাস পর ২ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সে। সেদিন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৬২।
মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছেছিল ১০ ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যুর পর মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছতে লেগেছিল ঠিক এক মাস। এরপর মৃতের সংখ্যা দুই হাজারে যেতে সময় লাগে ৮ দিন।
তার এক মাস পর ১৯ মার্চ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু। বিপর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ায় প্রতি দুই দিনে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার করে বাড়তে থাকে।