তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংযুক্তি করে গতকাল চিঠির মাধ্যমে সদস্যদের জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ঘোষিত ছুটির কারণে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি গ্রহণ না করায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও দেশের অন্যান্য বন্দরগুলোতে (বিমান ও নৌ) কন্টেইনারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বন্দরগুলোর নতুন কন্টেইনার নামানো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কন্টেইনারের অর্ধাংশই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর সদস্যভুক্ত কারখানার। এ সমস্যা নিরসনে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর সদস্যদের আমদানি করা পণ্য গ্রহণ করে বিধানানুযায়ী তাদের বন্ডেড ওয়্যারহাউজে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন- বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বস্ত্র সেলের সহকারী প্রধান শামীমা আকতার সই করা এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বন্দরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনসহ বন্দরগুলো সচল রাখার স্বার্থে অতিসত্তর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসহ অন্যান্য বন্দরে আসা কন্টেইনারগুলো জরুরি ভিত্তিতে ডেলিভারি গ্রহণ করাসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের বন্ডেড ওয়্যারহাউজে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
জানা যায়, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি, অন্যান্য শিল্পের যন্ত্রাংশ, খাদ্যপণ্য ও ওষুধের কাঁচামালসহ দেশের মোট ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রপ্তানির ৯০ শতাংশের বেশি হয় এই বন্দর দিয়ে। করোনাভাইরাসের মহামারীর প্রভাবে প্রায় ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয়ের যোগানদাতা তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় এবং কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা পণ্যের তেমন চাহিদা নেই।
উপরন্তু মহামারীর কারণে আমদানি পণ্য বন্দর থেকে নেওয়ার জন্য পরিবহনেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং ব্যাংক খোলা রাখার সময় কমে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দরকে সচল রাখতে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সমন্বয় সভাও অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শেখ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমদানিকারকরা সক্রিয় হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব। বেশিরভাগ আমদানিকারক পোশাক শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট। আপাতত বিকল্প হিসেবে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে (আইসিডি) সব ধরণের পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে খালাসের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
আইসিডিগুলোতে এখনো ১৫ হাজার কন্টেইনার রাখার মত জায়গা আছে। ১৫ হাজার কন্টেইনার খালি হলে বন্দর চত্বরে জাহাজ থেকে কন্টেইনার দ্রুত গতিতে নামানো সম্ভব হবে। তখন আর জাহাজকে বেশিদিন অপেক্ষায়ও রাখতে হবে না, কন্টেইনার জটও হবে না।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় ১৯টি আইসিডিতে ৩৮ ধরণের কনটেইনার পণ্য খালাস করা যায়। সব পণ্যের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে চেষ্টা চলছে বলে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান। মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক গতিতেই চলছিল।
ছুটি শুরুর পর গত তিন সপ্তাহে ক্রমাগত বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়া কমতে থাকে। পণ্যের ডেলিভারি নিতে উৎসাহিত করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে।
আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকদের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে পণ্য আনা-নেওয়াসহ বন্দরকেন্দ্রীক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা। তাদের সমিতি বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএফএফএ)। পর্যাপ্ত গাড়ি চলাচল না করা, ব্যাংক খোলা রাখার সময় কমে যাওয়া এবং শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে বিএএফএফএর সহ-সভাপতি (চট্টগ্রাম) অমির শঙ্কর বর্মন জানান।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময়ও যখন গাড়ি কম চলে তখন কন্টেইনার জমে যায়। এখন দীর্ঘ সাধারণ ছুটি চলছে। রপ্তানি কমে যাওয়ায় রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে যেসব গাড়ি আসে সেগুলোও খুব কম আসছে।ফলে আমদানি কন্টেইনার পাঠানোর জন্য গাড়ির সংকট প্রকট। পণ্য ছাড় করাতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে ব্যাংকে যেতে যেতে ব্যাংকিং আওয়ার শেষ হয়ে যায়। নগরীতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সিঅ্যান্ডএফ স্টাফরাও নানা বাধা পেরিয়ে স্বল্প ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারছেন না।