পোশাক কারখানা বন্ধ ও খোলা নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি হলে এক বিবৃতির মাধ্যমে তা পরিস্কার করেছে সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। ২০ মার্চ করোনার প্রাদুর্ভাব যখন বাংলাদেশে বাড়তে শুরু করে বিজিএমইএ সকল অংশীদারের সমন্বয়ে একটি জরুরি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেয় এবং চিঠি দেয়। ২১ মার্চ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে তার দফতরে এফবিসিসিআই, বিইএফ, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পোশাক কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে সবাই একমত হন। ২২ মার্চ শ্রম প্রতিমন্ত্রী দেশের শিল্পখাতের শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার দফতরে বৈঠক করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে পোশাক কারখানা খোলা রাখা হবে।
২৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয় ‘প্রয়োজনে ওষুধ শিল্প ও রফতানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখতে পারবে’। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা সকল সার্কুলারেও রফতানিমুখী শিল্প কারখানাগুলোকে সাধারণ ছুটির আওতামুক্ত রাখার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়। শুধু বিজিএমইএ নয় বরং উপরোক্ত দু’টি সভায় অংশগ্রহণ করা সকল প্রতিনিধি ও অংশীদারের ঐকমত্যে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তা ১২ এপ্রিল ও ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২৬ মার্চ সকালে বিজিএমইএ করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব আরও বেড়ে যাওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সকল কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক কারখানা ছুটির ঘোষণা দেয়ার সময় শ্রমিকদেরকে ছুটিকালীন সময়ে ঢাকায় যার বাসায় অবস্থান করতে এবং সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা পালন করে চলতে বলা হয়েছিল। ১ এপ্রিল কল-কারখানা অধিদফতর ‘শিল্প কারখানা চালু করা প্রসঙ্গে একটি নির্দেশনা জারি করে। যেখানে উল্লেখ করা আছে ‘এমতাবস্থায়, যে সকল রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ রয়েছে ও শিল্প কল-কারখানা সচল রাখতে আগ্রহী এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি অপরিহার্য পণ্য যেমন- পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, ওষুধপত্র ইত্যাদি উৎপাদনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সে সকল কল-কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে শিল্প কল-কারখানা চালু রাখতে পারবেন। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট স্পষ্টীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো’। ছুটি শেষে শ্রমিকদের দলবেঁধে ঢাকায় ফেরার দৃশ্য আমাদের নজরে আসলে আমরা সকলের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবং সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। বিজিএমইএ এর অন্তর্ভুক্ত কোনো কারখানা কোনো অবস্থাতেই বন্ধ রাখার আইনগত কোনো কর্তৃত্ব রাখে না। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার সরকারি নির্দেশনায় কিংবা ঐচ্ছিকভাবে সম্পূর্ণ সেই কারখানা কর্তৃপক্ষ বহন করে। বিজিএমইএ বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সংগঠন মাত্র।
এসব ব্যাখা তুলে ধরে বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, কারখানা খোলার ব্যাপারে বিজিএমই’র অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। কারখানা চালু করার আগে আমাদের নিজেদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে হবে। এ মুহূর্তে প্রথম ও একমাত্র অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে শ্রমিক ভাই-বোনদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার বিষয়ে। আমরা সবাই জানি যে আরএমজি সেক্টর আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কারখানার চাকা থেমে গেলেও শ্রমিক-মালিক একসঙ্গ জীবন বাঁচাতে জীবিকা রক্ষায় থাকতে হবে একে অপরের পরিপূরক হয়ে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার গাজীপুরে করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের জন্য গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার হয়নি। সে কারণে এর চিকিৎসা হলো লকডাউন নিশ্চিত করা। এই লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে আমরা গাজীপুরে মাঠ পর্যায়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এর প্রধান চ্যালেঞ্জ গাজীপুরে যে ফ্যাক্টরি খোলা থাকছে সেখানে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।