বুধবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সব রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের আসন্ন পবিত্র রমজানে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
তিনি বলেন, এবার আসন্ন পবিত্র রমজান একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে পালিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সীমিত রয়েছে। রমজানে ধর্মাচার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, কেউ যেন ধর্মীয় উসকানি, গুজব এবং করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যেন কোনও কারণে পণ্যের মূল্য না বাড়ে। পণ্যের কালোবাজারি রোধ এবং খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন আইজিপি।
আইজিপি বলেন, পণ্যের পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক জেলায় ত্রাণ নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে। আসার সময় ওই ট্রাকগুলো খালি ফিরে আসছে। ওই খালি ট্রাকগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণে কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। রিলিফ ও টিসিবি পণ্য এবং ভিজিএফ ও ওএমএস সুবিধা যেন জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে হবে।
হাওরে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, হাওরে হয়তো আরও শ্রমিক পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। তিনি শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার জন্য শ্রমিকবাহী গাড়ির সামনে ব্যানার এবং গাড়িতে শ্রমিকদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
আসন্ন রোজা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অথবা ইফতার বিতরণের নামে জনসমাগম না করেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, ত্রাণ বিতরণে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রমজানে যেন কোনোভাবেই ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
আইজিপি আরও বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেকের লকডাউন ভাঙার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালেও পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া, দেশের ৫টি বিভাগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় যে চিকিৎসা দেওয়া হবে, একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেওয়া হবে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় যেসব পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন তিনি। তাদের প্রার্থনা, বিনোদন ও বই পড়ার ব্যবস্থা করার জন্যও নির্দেশ দেন আইজিপি। তিনি বলেন, শুধু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের নয়, তাদের পরিবারেরও খোঁজ-খবর নিতে হবে, যেন তারা নিজেদের একা মনে না করেন।
আইজিপি বলেন, এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রান্তিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বাড়তে পারে। এ ধরনের অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেক ভালো কাজ করছে, পুলিশের অনেক অর্জন রয়েছে। এ অর্জন কোনোভাবেই ম্লান হতে দেওয়া যাবে না।
এ সময় বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, জঙ্গিরা যেন কোনোভাবেই কোনও তৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
এ পরিস্থিতিতেও যেসব গার্মেন্ট মালিক শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন তাদের প্রতি আইজিপি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। আর যারা এখনও বেতন দিতে পারেননি, তাদের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার অনুরোধ করেন। কোনও গার্মেন্ট চালু করলে যথাযথভাবে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার পরামর্শ দেন আইজিপি।