দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস বিকাশে আগে প্রতিদিন ২০ হাজারের মত নতুন অ্যাকাউন্ট যোগ হত। আর ৬ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে খোলা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট। ডাচবাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ এই সময়ে নতুন সাত লাখ এবং ডাক বিভাগের আর্থিক সেবা ‘নগদ’সাত লাখের কাছাকাছি নতুন গ্রাহক পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, এমএফএসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, শ্রমিকদের মধ্যে যাদের অ্যাকাউন্ট নেই, ২০ এপ্রিলের মধ্যে তা খুলে দিতে হবে। সে কারণেই এ সময়ে প্রচুর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের একটি বড় অংশ নারী। তাদের একটি অংশের বেতন আগে থেকেই মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে হত। কত শ্রমিক এখনও অ্যাকাউন্টের বাইরে আছেন তা স্পষ্ট নয়।
বিকাশের কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম গণমাধ্যমকে বলেন, লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় ঘরে বসে কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় লেনদেন সারতে এমনিতেও বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে।
তবে নতুন করে যে সাড়ে ১২ লাখ হিসাব খোলা হয়েছে, এর বড় অংশই পোশাক খাতের শ্রমিকদের। আমরা নিজেরা অনেক হিসাব খুলে দিয়েছি। আবার কারখানাগুলোর উদ্যোগেও হিসাব খোলা হয়েছে। ৪০০ পোশাক কারখানার প্রায় ৪ লাখ শ্রমিকের বেতন আগে থেকেই বিকাশের মাধ্যমে হত। নতুন সাড়ে ১২ লাখ গ্রাহক পাওয়ার আগে বিকাশের হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ কোটির মত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখনও হিসাব খোলা অব্যাহত রেখেছে এমএফএসগুলো। শ্রমিকদের বেতন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, যে সব কারখানা সচল আছে সে সব কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের চলতি এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের বেতন-ভাতা প্রণোদনা তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে সচল রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মচারীদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতন ভাতা এবং সরকারি প্রণোদনা পরিশোধ করা যায়।
এজন্য শ্রমিক অথবা কর্মচারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হবে। তবে এই হিসাব খোলার জন্য কোনো ধরনের চার্জ বা ফি কাটা হবে না। এই হিসাব খোলার জন্য ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উৎসাহিত করার জন্য প্রচারণাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- বেতনের অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে হবে। কোনো প্রকার নগদ লেনদেন করা যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ব্যাংক হিসাব নেই তাদের মালিক নিজ উদ্যোগে ব্যাংক হিসাব খুলে দেবেন। এসব হিসেবে কোনো চার্জ আরোপ করতে পারবে না। এরপর এ খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের সুবিধার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে তারা নিজ নিজ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টেই বেতন-ভাতা পাবেন।
১১০ পোশাক কারখানার শ্রমিক মার্চের বেতন পাননি: এদিকে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত সর্বমোট ২ হাজার ২৭৪ তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানার রয়েছে। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে ২ হাজার ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান। এখনও বকেয়া রয়েছে ১১০টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের বেতন। এ তথ্য জানিয়েছে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বিজিএমইএ থেকে জানানো হয়েছে, বিজিএমইএর কারখানায় কর্মরত ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ শ্রমিকের মধ্যে ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ জন মার্চ মাসের বেতন পেয়েছেন। এ হিসাবে এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি ৭৭ হাজার ৯১৭ গার্মেন্টস শ্রমিক। বিজিএমইএর সদস্য দুই হাজার ২৭৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে। বাকি ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বেতন পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।