তবে শতকরা ৫ শতাংশ সুদে দেয়া এ ঋণের বদলে কৃষকদের জন্য বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সানেম নেটিজেন ফোরামের চতুর্থ আলোচনা থেকে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়।
বর্তমান মহামারীর ফলে বিরাজমান সংকট ও আসন্ন সংকটের বিভিন্ন আঙ্গিক ও উত্তরণের উপায় নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, নীতিনির্ধারক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার জন্য একটি ইন্টারনেটভিত্তিক প্লাটফর্ম ‘সানেম নেটিজেন ফোরাম’।
এরই মধ্যে এ ফোরামের চারটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ অনলাইন এ আলোচনা পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় গত শনিবার দুপুরে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানের পরিচালনায় স্কাইপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা পর্বে সানেমের পক্ষ থেকে আরো অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও সানেমের গবেষণা ফেলো মাহতাব উদ্দিন।
আলোচনার শুরুতে ড. রায়হান মহামারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হিসাবের সমস্যা এবং এ নিয়ে বিতর্কগুলোর ওপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, চলমান মহামারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হিসাব করার জন্য সানেম কাজ করছে এবং এটি ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে যে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গত কয়েক দশকের অর্জন এই মহামারীর ফলে ম্লান হয়ে যেতে পারে। টাকা ছাপানোর ফলে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে, অর্থায়নের জন্য আর কোনো বিকল্প না থাকলে এ উপায় অনুসরণের কথা বলেন ড. রায়হান।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর জোর আরোপ করে ড. রায়হান বলেন, বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোয় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হলেও বাংলাদেশের নীতিপ্রণেতারা সেটি করেন না। সানেমের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতের জন্য জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়।
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সানেমের এ আলোচনা থেকে অনেকগুলো প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, বিশ্ববাজারে ক্রমহ্রাসমান তেলের দামের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় বাজারেও তেলের দাম একইভাবে কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে, এতে করে নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের জনগণ কিছুটা সুবিধা পাবে।
প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থায়নের বিষয়ে সানেম তাদের প্রস্তাবে বলছে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বারবার দেয়ার ফলে, কালো টাকা অর্থাৎ অবৈধ সম্পদ বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরো জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
সানেমের প্রস্তাবে আরো বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য খাত ও অঞ্চলভিত্তিক নির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের শস্য কেনার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
কৃষিতে যন্ত্রায়ণ করা সময়ের দাবি বলে মনে করে সানেম। তারা বলছে, গিগ অর্থনীতিতে নিয়োজিত সেবাদানকারীদের সাহায্যের জন্য নীতিপ্রণয়কদের এগিয়ে আসতে হবে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে বাসা থেকে কাজ করা বা হোম অফিসভিত্তিক ডিজিটাল কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই সাধারণত এ ধরনের কাজ করে থাকেন এবং অনেক কর্মপরিবেশই হোম অফিস সহায়ক নয়। হোম অফিসের মনস্তাত্ত্বিক আঙ্গিকটিও বিচার করার দরকার আছে।
দক্ষ নাগরিক তৈরির বিষয়ে সানেম তাদের প্রস্তাবে বলছে, স্বল্পশিক্ষিত ও কম দক্ষ তরুণদের চেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন তরুণদের কাজ পেতে বেশি সমস্যা হবে। সরকারের নীতিপ্রণয়কদের এখনই এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করা উচিত।
এছাড়া সানেমের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষদের বাসা ভাড়ার জন্য ভর্তুকি চালু করা দরকার। প্রান্তিক মানুষদের সহায়তার জন্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের কৃষি খাতের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সকল পর্যায়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের এখন থেকে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নিয়ে চিন্তা করতে হবে বলেও সানেমের প্রস্তাবে বলা হয়েছে।