আইএফআইসি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল অফিসার আজিজুর রহমান গত অক্টোবর মাসে চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর ডিসেম্বরে তাবলীগ জামাতে ৩ চিল্লায় (১২০ দিন) যান। নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পর ঢাকায় ১০ দিন থেকে পিকআপে করে গত ৪ এপ্রিল খুলনায় ফেরেন। যেদিন বাড়িতে আসেন ওই দিনই রাতেই তার জ্বর আসে। জ্বর বেড়ে যাওয়ায় ১৩ এপ্রিল তিনি নমুনা পরীক্ষা করতে দেন এবং ১৪ এপ্রিল তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।
আজিজুর রহমান জানান, তার জ্বর ও কাশি থাকলেও গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল না। করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার বাসায় গিয়ে তাকে বাসায় আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তারা ওধুধ লিখে দেন। তিনি প্রতিদিন সকালে ও রাতে একটি করে অ্যান্টিবায়োটিক জি ম্যাক্স এবং ৩ বেলা তিনটি নাপা, কোনো কোনোদিন ৪টি নাপাও খেয়েছেন। এ ছাড়া যথারীতি ডায়াবেটিস ও প্রেসারের ওষুধ খেতেন। দিনে ২/৩ বার গরম পানির বাষ্প নাকে-মুখে টানতেন। গরম পানির ভাপ নিলে তখন কাশি কমে যেতো, শরীরও ভালো লাগতো।
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের কাউকে আমার কাছে আসতে দিতাম না। আমি আলাদা একটি কক্ষে থাকতাম। ৬ ফুট দূরত্বে থেকে পরিবারের সদস্যরা আমার খাবার দিতো। আমার প্লেট-গ্লাস কাউকে ধরতে দেইনি। ভাবতাম আল্লাহ যদি নেয় আমাকে নিয়ে যাক।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ যদি হেফাজত না করে তাহলে বাঁচার কোনো উপায় নেই। অসুস্থ্য থাকা অবস্থায় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছি, আল্লাহ তুমি আমার জীবনটা নিয়েও যদি পরিবারের সদস্যদের সুস্থ্য রাখো তাহলে আমি খুশি। সবসময় দোয়া করেছি- আমার পরিবারের সবাই যেন সুস্থ্য থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন করোনা পজেটিভ ছিল, তখন মনে হতো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো। জীবনে কোথায় কোথায় ভুল ছিল সেগুলোর ব্যাপারে তওবা পড়েছি। যদি বেঁচে যাই তাহলে অতীতে কোনো ভুল করে থাকলে তা আর করবো না বলে মনস্থির করি। মোবাইল করে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি যে, কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। তারা সবাই আমার জন্য দোয়া করেছে।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘যতদিন করোনা পজেটিভ ছিল খুব টেনশন হতো। ৪ এপ্রিল জ্বর হওয়ার পরও ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী একসাথেই ছিলাম। স্ত্রী ও আমি এক খাটেই ঘুমাতাম। এটা আমার চরম ভুল ছিল। ভয়ে ছিলাম আমার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছে কিনা। বারবার অনুশোচনা হতো, সবকিছু জানার পরও এবং জ্বর হওয়ার পরও কেন পরিবারের সদস্যদের সাথে একসঙ্গে থাকলাম। মনের মধ্যে বারবার কষ্ট হয়েছে। পরিবারের সবাইকে কি শেষ করে দিলাম? যখন পরিবারের ১০ জন সদস্যের নমুনা পরীক্ষার পর করোনা নেগেটিভ আসে তখন আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। আল্লাহ অনেক রহমত করেছে।’
ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০ এপ্রিল এবং ২২ এপ্রিল দুই দফায় আমার নমুনা পরীক্ষার পর ফলাফল করোনা নেগেটিভ এসেছে। তারপরও বাড়তি সতর্কতার জন্য চিকিৎসক আমাকে ৪ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।’
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘তাবলীগের সাথীদের ১৭ জনের সবার খোঁজ নিয়েছি, তারা সবাই সুস্থ্য আছেন। চিল্লা শেষে এক সাথে ১১ জন খুলনায় ফিরি। বেশ কয়েকজনের পরীক্ষাও করানো হয়েছে, তাদের ফলাফল নেগেটিভ।’
যারা আক্রান্ত হয়েছে কিংবা হয়নি, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?-এ প্রশ্নের উত্তরে আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার পরামর্শ হচ্ছে-সবচেয়ে বড় কথা তায়াকালতু আল্লাহ। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহই সবকিছু পারে, এই রোগটা আল্লাহ-ই দেন, আল্লাহ যদি চান মাফ করে দেবেন। আল্লাহ যদি না চান তাহলে হাজার ওষুধ দিয়েও কিছু হবে না। সবাইকে আস্তাগফার পড়ে দোয়া করতে হবে-আল্লাহ আমি গুনাহ করেছি, আমাকে মাফ করে দাও।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দার জানান, দুই বার নমুনা পরীক্ষায় আজিজুর রহমানের ফলাফল করোনা নেগেটিভ এসেছে। তিনি এখন সুস্থ্য আছেন।