তবে এ ধরনের একটি চুক্তির বিষয়ে অনেক আগেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়। কিন্তু দেশ দুটি তাদের পারস্পরিক অগ্রাধিকারের জায়গা ঠিক করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তির উদ্যোগ তখন আর সামনে এগোয়নি। অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই চুক্তির উদ্যোগ হোঁচট খায়।
এশিয়া অঞ্চলের পরাশক্তি চীন একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ভারতে পণ্য আমদানির বড় উৎস। কিন্তু ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চীনের ভূরাজনৈতিক বিরোধ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ দুটিকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে চাইছে তারা। এ অবস্থায় ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে তা দেশ দুটিকে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে। বলা যায়, এটা নতুন মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
বর্তমানে ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের পরিধি বেড়েছে। এই খাতের উন্নয়নের জন্য ভারতের প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার খনিজ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি, যা ভারত সরবরাহ করতে পারবে। তাই বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক প্রাধান্যের দিক থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হবে এই চুক্তির মাধ্যমে।
চীনের সঙ্গে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিরোধও এই চুক্তির ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। বছরখানেক আগেও অস্ট্রেলীয় ওয়াইনের বড় বাজার ছিল চীনে। কিন্তু বাণিজ্য নিয়ে বিরোধের জেরে গত বছর ওয়াইনের ওপর ২১৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চীন।
ফলে রপ্তানি ৩০ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া করোনাভাইরাস শুরুর পর এর উৎস অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়া আবেদন করে। এর প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ১৩টি খাতের প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন। এসব কারণে ভারতের সঙ্গে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অস্ট্রেলিয়ার কাছে চীনের বিকল্প তৈরি করতে পারে।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য নিয়ে কাজ করে এমন একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হলো নিউল্যান্ড গ্লোবাল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক নাতাশা ঝা ভাস্কর বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি উভয় দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক গতিমুখ নির্ধারণে সহযোগিতা করবে।
মোদি সরকারের অধীনে ভারতের রপ্তানি নির্ভর উৎপাদন খাত বেশ উন্নয়ন করেছে। এ ছাড়া উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দিচ্ছে তারা। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত নতুন যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। সেই গাড়ি কিংবা বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে ব্যবহৃত লিথিয়াম মজুতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে ভারত ওয়াইন আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ শতাংশ করবে বলে আশা করছে অস্ট্রেলিয়া। এতে ভারতের বিশাল বাজারে অস্ট্রেলীয় কোম্পানিগুলো ভালো জায়গা করে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এতে পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক ইয়ান হল। তাঁর মতে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মতো অস্ট্রেলিয়ার কয়লা, লৌহ ও শস্য ভারতের জন্য অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতের জন্য অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কেবল এই চুক্তির জন্যই অপেক্ষা করছে না, গত ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এফটিএ করেছে এবং ভারত ফেব্রুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে।