এ বিষয়ে বগুড়া বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা একেএম মাহফুজুর রহমান জানান, দেশের কৃষি যন্ত্রাংশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করে বগুড়া বিসিক শিল্পনগরী। কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কারখানাগুলোতে প্রতিদিন কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।
এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে সেন্টিফিউগাল পাম্প, পিস্টন, টিউবওয়েল, সিএনজি অটোরিকশার ও জুটমিলের খুচরা যন্ত্রাংশ, মোটরসাইকেলের ব্রেক ড্রাম, নাট, বল্টুসহ অন্যান্য হালকা প্রকৌশল যন্ত্রাংশ। বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ ১৬৩ কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে। এ শিল্পনগরীতে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীতে বিভিন্ন ধরনের ৪৫টি হালকা প্রকৌশল শিল্প-কারখানা রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতিতে বিসিকের সার্বিক সহায়তা ও তত্ত্বাবধানে বর্তমানে এ শিল্পনগরীতে ৩৫টি শিল্প-কারখানা চালু রয়েছে। গড়ে দৈনিক ১ কোটি টাকার অধিক মূল্যমানের হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হচ্ছে এখানে। এসব খুচরা যন্ত্রাংশ সমগ্র দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত, নেপাল, ভুটানে রফতানি হয়ে থাকে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কৃষি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে বিসিকের বগুড়া শিল্পনগরী। হাওড় অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় বোরো মৌসুমের ধান দ্রুত সংগ্রহে কৃষকদের কৃষি যন্ত্রাংশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ শিল্পনগরীর কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে।
বিসিকের বগুড়া শিল্পনগরীর অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেসার্স মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী মো. আজিজার রহমান মিলটন জানান, দেশের কৃষিকাজে ব্যবহূত যন্ত্রাংশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিসিকের সার্বিক সহযোগিতায় তার প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ৩০০ জন শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৫ টনের অধিক সেন্টিফিউগাল পাম্প, পিস্টন, টিউবওয়েলসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদন করছে। এগুলোর মূল্য আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা। তার প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রাংশ দেশে বাজারজাতের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোয় রফতানি করে থাকে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে রফতানি বন্ধ থাকলেও দেশের চাহিদা মেটাতে এসব যন্ত্রাংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
জানা গেছে, সারা দেশে হালকা প্রকৌশল যন্ত্রাংশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৬৪ সালে ১৪ দশমিক ৬০ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বগুড়া বিসিক শিল্পনগরী। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৮০ সালে আরো ১৮ দশমিক ৬৭ একর জমিতে সম্প্রসারণ করে বতর্মানে ৩৩ দশমিক ১৭ একর ভূমির ওপর এ শিল্পনগরীর উৎপাদন কার্যক্রম চলছে।
বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীর শিল্প মালিক ও স্থানীয় উদ্যাক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো ৩০০ একর আয়তনের আরেকটি বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। শিল্পনগরীটি বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া সরকারের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক রাজস্ব আয় হবে বলে জানান শিল্পনগরীর কর্মকর্তা।