জাতিসংঘে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এই বাহিনীর সদস্যরা নীরবে নিভৃতে মানুষকে মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যাদের ঘরে খাবার নেই, নীরবে চোখের জল ফেলছেন তাদের ঘরেও পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার। সেটা হোক গ্রাম, পাহাড় বা শহরে। ৬২ জেলায় ৫৪৬টি টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।
শান্তিরক্ষী মিশনে অনেক দেশেই টিকতে পারে না বহু দেশের সেনা সদস্যরা। সেইসব যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বাড়ি-ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। দেশের এই দুর্দিনে মৃত্যুভয় জয় করে দেশবাসীকে সুরক্ষায় সাধ্যমতো কাজ করছে।
চিকিত্সাসেবা, জনসমাগমের পয়েন্টগুলোতে মাইকিংসহ জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা বা বিভাগীয় শহরে কোনো ক্যাম্প স্থাপন না করে প্রতিটি এলাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকেই ছুটছেন সেনা সদস্যরা।
দুর্যোগকালীন সময়ে সড়কপথ ব্যবহার না করে প্রতিটি জেলার সেনাবাহিনীর টিমের জন্য প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এভিয়েশন গ্রুপের একাধিক হেলিকপ্টার ও কাসা বিমান।
অদৃশ্য জীবাণু করোনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কার্যত এই যুদ্ধের পাশাপাশি মানবতার পক্ষের লড়াইয়েও নিজেদের অবতীর্ণ করেছে সেনাবাহিনী।
মানবিকতাবোধে জাগ্রত হয়ে দেশের ৬২টি জেলাতেই কর্মহীন গরিব ও দুস্থদের বাঁচিয়ে রাখতে নিত্যপণ্য বিতরণের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। হুড়াহুড়ি বা শোডাউন প্রবণতার বাইরে গিয়ে তারা গরিব ও দুস্থদের ত্রাণের প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি।
দেশের প্রতিটি দুর্যোগে সেনাবাহিনী মাঠে থেকে কাজ করেছে। করোনা ঠেকাতে তাদের অংশগ্রহণ সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দেশ সিয়েরা লিওনে ১১ বছর যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না, খাবার ছিল না, মানুষের ঘর ছিল না। জাতিসংঘ মিশনে অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
চিকিত্সার ব্যবস্থা করেছেন। ঢাকা থেকে টিন নিয়ে ঘর করে দিয়েছেন। এর কারণে জাতিসংঘ তাদের মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছে। সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ তেজানের কাছে দেশটির জনগণ তাদের মাতৃভাষা বাংলা করার দাবি জানিয়েছিল।
তারা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও গেয়েছেন। তবে সিয়েরা লিওন সরকার বাংলাভাষাকে দ্বিতীয় মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। শুধু সিয়েরা লিওন নয়, সেন্ট্রাল আফ্রিকাসহ আফ্রিকার অনেক দেশেই সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে জনগণের মন জয় করেছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।
কৃষির উত্পাদন স্বাভাবিক রাখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের হাতে সেনাসদস্যরা তুলে দিচ্ছেন নানা জাতের উন্নত সবজির বীজ। সেনাবাহিনীর এমন কর্মপ্রয়াসকে ইতিবাচক, বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী বলেই মন্তব্য করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সামগ্রিক উত্পাদনের ওপরও বিশেষ নজর দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। সামনের দিনের খাদ্য সংকট ও মন্দা কাটাতেই কৃষি অর্থনীতিকে আরো মজবুত করতে কৃষির উত্পাদন বাড়াতে মাঠপর্যায়ের কৃষককে নিজেদের সাধ্যমতো সহায়তারও ‘বিশেষ বার্তা’ দিয়েছেন বাহিনীর দায়িত্বশীলদের।
‘আতঙ্ক না ছড়াই, সতর্ক থাকি, সাহায্য করি’ কিংবা ‘ঘন ঘন হাত ধুই, করোনা থেকে নিরাপদ রই।’ তাদের টহল গাড়িতেও দেখা মিলছে ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করুন’ লেখা স্টিকার। সেনাসদস্যদের দেশমাতৃকার সেবায় ক্লান্তিহীন পথচলা। দেশপ্রেমের প্রশ্নে অনড়, সাহসী এবং লড়াকু সেনাবাহিনী।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পর করোনাযুদ্ধেও দক্ষ ও চৌকস সেনা সদস্যদের লড়াই-সংগ্রামের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে সাফল্যের অক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।