মঙ্গলবার (১২ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় সংস্থাটি। জরিপটি চালিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স ও চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টর।
জরিপে বলা হয়, শহরের বস্তি, চা বাগান এবং সুবিধাবঞ্চিত গ্রামাঞ্চলের ১০-১৮ বছর বয়সী ১২১ জন শিশুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহ করা তথ্য বলছে, উপার্জনক্ষম সদস্যরা আয়ের সুযোগ হারাতে থাকায় পরিবারের খাদ্য সুরক্ষা পরিস্থিতি একটি সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ১২১ জনের মধ্যে ৪০ শতাংশ ছেলে ও ৬০ শতাংশ মেয়ে, আছে প্রতিবন্ধী শিশুও।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, জরিপের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের ওপর কোভিড-১৯ সংকটের প্রভাব উন্মোচন করা এবং বিরূপ প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য সরকারি সংস্থা ও এনজিওর কৌশল এবং কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা। এই শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই সরকার বা কোনও বেসরকারি সংস্থা থেকে সাহায্য পায়নি বলে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। এই তথ্য থেকে অনুমান করা যায় যে, সাধারণ খাদ্য বিতরণসহ সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ঘোষিত উদ্যোগগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে পৌঁছায়নি এবং বেসরকারি উদ্যোগগুলোও অপর্যাপ্ত।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার পরিচালনা সেক্টরের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'এই সংকটটি শিশুদের শারীরিক এবং মনো-সামাজিক সুস্থতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। আমরা এই সংকট সম্পর্কে জানতে সবচেয়ে প্রান্তিক শিশুদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি, এই জরিপটি শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরিপের ২০টি প্রশ্ন থেকে জানা যায়, ৯০ শতাংশ শিশুকে স্কুল থেকে লেখাপড়ার কোনও খোঁজ নেওয়া হয়নি, ৯১ শতাংশের বাড়িতে পড়াশোনায় সাহায্য করার মতো কেউ নেই এবং ২৩ শতাংশ বাসায় একেবারেই লেখাপড়া করছে না। সাধারণত যে শিশুরা বাড়িতে লাঞ্ছনার মুখোমুখি হয়, তাদের মধ্যে ২১ শতাংশ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে-এ ধরনের শাস্তি বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে, শারীরিক শাস্তির ক্ষেত্রে এটি ৪৭ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী সেভ দ্য চিলড্রেন ‘প্রোটেক্ট এ জেনারেশন ফ্রম কোভিড-১৯’— এই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিপর্যয় এড়াতে প্রয়োজন কমিউনিটি, জাতীয় এবং বৈশ্বিক পর্যায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ। এর আলোকে, জরিপটি সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পাঁচটি সুপারিশ দেয়।
সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে—সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি হ্রাস, প্রয়োজন আছে এমন পরিবারগুলোর জন্য জীবিকার সহায়তা দেওয়া, স্কুল-কলেজের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষায় সহায়তা করতে নিয়মিত ফলো-আপ, সহিংসতা থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং সংকট মোকাবিলায় শিশুদের মনো-সামাজিক সহায়তা প্রদান।
এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে শিশু অধিকারভিত্তিক একটি জাতীয় রেসপন্স কৌশলকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলেও জানায় সংস্থাটি।