চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপং ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন । রাশিয়াসহ ১৩০ দেশের ১৪ হাজার প্রতিনিধি ছিলেন সম্মেলনে।
৫.৬৩৯ ট্রিলিয়ন রুবলের ৬৯১টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ক্রেমলিন জানিয়েছে, বড় ধরনের সাইবার হামলার কারণে অনুষ্ঠানটি ৯০ মিনিট বিলম্বে শুরু হয়। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সিএনএন।
কোনো রাখঢাক না রেখে ভাষণের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন পুতিন। সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কার করে বলেন, স্নায়ুযুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর থেকেই নিজেদের পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে ঘোষণা করে আমেরিকা। যাদের কোনো দায়িত্ব নেই- শুধুমাত্র স্বার্থ। তারা সেই স্বার্থগুলোকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছে। এখন এটি একটি একমুখী পথ, যা বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে।’
আমেরিকা ও তার দোসরদের আসল চেহারা তুলে ধরে পুতিন বলেন, শীতল যুদ্ধের পর থেকেই পৃথিবীর সব দেশকেই নিজেদের উপনিবেশ মনে করে তারা। অন্য দেশের মানুষকে ভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এই চিন্তার মাধ্যমে পুরো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করে। যদি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব মানতে না চায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সেই ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করে নেয়।
ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, বাধ্য হয়ে সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে রাশিয়া তাদের স্বার্থ এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকার রাখে। গত ৮ বছর ধরে দনবাসে ‘আমাদের জনগণের ওপর’ গণহত্যা চালানো হচ্ছিল। অস্ত্র জুগিয়ে এ কাজে কিয়েভকে এগিয়ে দিচ্ছিল পশ্চিমা দেশগুলো। দনবাসের রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষাতেই অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। সেটা সফল হবে এবং তাতে ‘কোনো সন্দেহ নেই’ ।
নিষেধাজ্ঞাকে কটাক্ষ করে পুতিন বলেন, পশ্চিমারা নির্বোধ। যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা এরই মধ্যে বুমেরাং হয়েছে। উলটো পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট চরমভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। এখন মূল্য দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিকরা। তাদের ক্ষতির পরিমাণ এ বছরে ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইইউ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে। অন্যের বাঁশির সুরে নাচছে তাদের আমলারা। উপর থেকে তাদের যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তারা তাই মেনে নিচ্ছেন এবং তারা তাদের দেশের জনগণের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে ইউক্রেনের ইইউতে ঢুকতে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি।
কারণ হিসাবে বলেন, ন্যাটোর মতো সামরিক জোট নয় ইইউ। বিশ্বজুড়ে মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, রাশিয়াকে দোষারোপ করা বোকামি। এই দোষারোপ করা হচ্ছে মূলত যারা লেখাপড়া জানে না তাদের বোকা বানানোর জন্য। আমাদের নয়, নিজেদের দোষারোপ করুন। রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর গ্যাস আমদানির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বাদ দেওয়ার কারণে জ্বালানির দাম বেড়েছে। বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য তিনি রাশিয়ার সার এবং খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেন।
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে মার্কিন প্রশাসন এবং ইউরোপীয় আমলাতন্ত্র দায়ী। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে দুর্ভিক্ষ অনেকটা অত্যাসন্ন, সেসব দেশে রাশিয়া খাদ্য পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে কিন্তু সেখানেও বাধা পশ্চিমা গোষ্ঠীর নিষেধাজ্ঞা।