যুক্তরাজ্যে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম

যুক্তরাজ্যে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম
বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যুক্তরাজ্যে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। বাড়তি এই খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশটির নাগরিকেরা। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন ঋণ নিতে। আবার কেউ বিক্রি করেছেন বাসার আসবাব। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যাঁরা বিপত্তির মধ্যে রয়েছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশটির ভোক্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্টিন লুইস। তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র কয়েকজনের সঙ্গে তাঁদের উদ্বেগের বিষয়ে কথা বলেছি। এর বাইরে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা জানেন না এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবেন।’

সাধারণ নাগরিকদের এই দুর্দশাকে ‘জাতীয় সংকট’ হিসেবে দেখছেন মার্টিন লুইস। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে।

জেমস গিলমোরের বাড়ি এসেক্স অঞ্চলে। তিন সন্তান ও সঙ্গীকে নিয়ে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল প্রতি মাসে ১৪৫ পাউন্ড থেকে বেড়ে ৩২০ পাউন্ডে গিয়ে ঠেকেছে। দাম বাড়ানোর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী অক্টোবর থেকে ৬০০ পাউন্ডের বেশি বিল পরিশোধ করতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন গিলমোর।

একটি গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন গিলমোর। তাঁর সঙ্গী খণ্ডকালীন শিক্ষক। গিলমোর বলেন, ‘পাঁচজনের একটি সংসারে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের এই বিল পরিশোধের সক্ষমতা নেই।’ তিনি জানান, জ্বালানির বিল বাড়ায় মাসের অর্ধেক যেতে না যেতেই তাঁদের খাবার ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার জন্য হাতে আর কোনো অর্থ থাকছে না।

জেমস গিলমোরের বাড়ি এসেক্স অঞ্চলে। তিন সন্তান ও সঙ্গীকে নিয়ে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল প্রতি মাসে ১৪৫ পাউন্ড থেকে বেড়ে ৩২০ পাউন্ডে গিয়ে ঠেকেছে। দাম বাড়ানোর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী অক্টোবর থেকে ৬০০ পাউন্ডের বেশি বিল পরিশোধ করতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন গিলমোর।

এমন অবস্থায় সংসার চালাতে পাঁচ হাজার পাউন্ড ধার নিয়েছেন গিলমোর। এর জন্য পাঁচ বছর ধরে প্রতি মাসে তাঁকে ৯৩ পাউন্ড করে ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে। ফলে সুদ, আসলসহ তাঁকে মোট পরিশোধ করতে হবে ৫ হাজার ৫৬৭ পাউন্ড। সুদের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

বিবিসিকে গিলমোর বলেন, ‘এই সংকটে টিকে থাকার জন্য এই পথটিই শুধু আমার সামনে খোলা ছিল। আশা করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কারণ, আগামী বছরগুলোতেও যদি সংকট থাকে, তাহলে আরেকটি ঋণ নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।’

ম্যাকক্লেসফিল্ড শহরে স্বামীকে নিয়ে একটি জিম (ব্যায়ামাগার) চালান এমিলি উইলকিনসন। জ্বালানি সংকটের কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে তাঁদের। এমিলি বলেন, ‘আমাদের ওপর ধাক্কাটা দুই দিক দিয়ে এসেছে। আমাদের বাসাবাড়ির বিল বেড়ে প্রতিবছরে তিন হাজার পাউন্ড হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের জিমেও বিদ্যুৎ বিলও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।’

এমিলি বলেন, মাত্রই তাঁরা করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন। তখনই জ্বালানি খরচ মাসে ৪৮০ পাউন্ড থেকে বেড়ে ১ হাজার পাউন্ড করা হয়।

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিনের বিদ্যুতের স্ট্যান্ডিং চার্জ (ব্যবহার যা–ই করা হোক না কেন, নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ প্রদান) ৮১৮ শতাংশ বাড়ানো হবে বলে জানান এমিলি। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সবাই টিকে থাকার জন্য লড়াই করছেন। তবে আমার মনে হয়, সরকার ছোট ব্যবসায়ীদের কথা ভুলে গেছেন।’

এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না। কারণ, এতে তাঁরা ক্রেতা হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। এমিলির ভাষায়, ‘করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর সাধারণ মানুষ ভেবেছিল সমস্যা কেটে গেছে। তবে এখন আমরা বুঝতে পারছি যে লড়াইটা সবে শুরু হয়েছে।’

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না। কারণ, এতে তাঁরা ক্রেতা হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। এমিলির ভাষায়, ‘করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর সাধারণ মানুষ ভেবেছিল সমস্যা কেটে গেছে। তবে এখন আমরা বুঝতে পারছি যে লড়াইটা সবে শুরু হয়েছে।’

গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা ডালাস লুকাস (৪৮)। মাসে ৬৩৫ পাউন্ড করে ভাতা পান। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর অনেকের মতো তিনিও টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি যে অর্থ পান, তার মধ্য থেকে ৩৩০ পাউন্ড দিতে হয় এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদ। বাকি টাকায় সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাঁর জন্য।

একসময় ডালাস লুকাসকে প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিতে হতো ৩০ পাউন্ড। কয়েক মাস আগে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ পাউন্ডে। ওই অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা তাঁর নেই। এই নারী বলেন, ‘আমি গ্যাস সরবরাহকারীদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে বলেছিলাম, যেন আমি শুধু বাকি পড়ে যাওয়া বিলটা পরিশোধ করতে পারি। তবে তারা তা করেনি।’

বাড়িভাড়া, বিলের অর্থ ও কর পরিশোধ করতে বাড়ির অনেক আসবাব বিক্রি করে দিয়েছেন ডালাস লুকাস। তাঁর রান্নাঘরে এখন শুধু রয়েছে একটি ফ্রিজ, একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেন আর একটি কেটলি। তিনি বলেন, ‘গ্যাস কোম্পানি আমার কাছে সবকিছু দাবি করছে। তাই বিল পরিশোধের জন্য বাকি সবকিছু বিক্রি করেছি।’

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেট্রোল-ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণা
ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে মুসলিম ৬ দেশ
মারা গেছেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর
২০২৩ এ আলোচিত বিশ্বের সেরা ১০ ঘটনা
ব্রিকসে যোগ দেবে না আর্জেন্টিনা
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী
১০ টাকাতেই মিলবে বই
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট
সৌদি আরবে আরো একটি স্বর্ণের খনির সন্ধান
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপলো ইন্দোনেশিয়া