কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক টেকসই, পুনঃরুদ্ধার, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং এফডিআই নিয়ে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের সব স্তরের মানুষ দৃষ্টান্তমূলক একটি মানবতা দেখিয়েছে। দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য এফবিসিসিআই একটি উপদেষ্টা কাঠামো প্রণয়ন হিসেবে কাজ করছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব বের করতে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের নেতা, স্টেকহোল্ডার, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও শিল্পনেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করে চলছে এফবিসিসিআই। দেশের ছোট ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর কাছে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ পৌঁছে দেয়ার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে এটিই প্রথম পরামর্শমূলক ব্যবস্থা, যা ব্যসায়ীদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।
সালমান এফ রহমান বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করতে হবে। কারণ মানবশক্তি ছাড়া কোনোভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা যাবে না। সেজন্য টেলিমেডিসিন সেবাকে আরো বেশি সক্রিয় করতে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য খাতের মধ্যে আইটি ব্যবস্থাকেও একত্রিত করতে হবে। এরই মধ্যে মহামারী মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী পাঁচ হাজার নতুন চিকিৎসক ও তিন হাজার টেকনিশিয়ান নিয়োগ করেছেন। এছাড়া দেশের জেলাভিত্তিক হাসপাতালগুলোয় আইসিইউর ব্যবস্থা করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বর্তমান আমরা অনেকটাই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই মহামারীর সময়ে ব্যবাসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা, রেডিমেন্টস গার্মেন্টস নিয়ে বিভিন্ন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন দেশের সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা এরই মধ্যে অর্থনৈতিক চাকা সচল করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এছাড়া আসন্ন বাজেটেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই সব সংকট কাটিয়ে দেশকে আবার উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, দেশের এই মহামারীর সময়ে অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখে দেশের স্বাস্থ্য খাত, শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন সময়েও আমাদের অনেকগুলো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তার পরও আমাদের অর্থনৈতিক দিক ঠিক রয়েছে। তবে করোনা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এ পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আমাদের স্বল্প ও দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় স্বল্পতা রয়েছে, সে বিষয়গুলোর ওপর নজর দিতে হবে এবং শিল্প খাতের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর বিষয়েও আমরা আলোচনা করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, গত কয়েক বছরের বাজেট আমাদের চরম দারিদ্র্যসীমা উত্তরণে সাহায্য করলেও করোনা আবারো সেই অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়েছে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ যদি কার্যকর হয়, তাহলে করোনা মহামারীর ক্ষতি আমরা শিগগিরই কাটিয়ে উঠতে পারব। এছাড়া দেশের কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের রফতানি খাতকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারি এবং সেই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করা সম্ভব।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিপণ্য উৎপাদনের দিক দিয়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মহামারীর সময়ে দেশে যাতে খাদ্যের সংকট না পড়ে, সেজন্য করোনা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কৃষকরা প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য উদ্বৃত্ত উৎপাদন করে আসছেন। এছাড়া জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রফতানি খাতের দিকেও নজর দিতে হবে।
ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মারসি মিয়াং টেম্বন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, একে আজাদ, আবদুল মাতলুব আহমেদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, এনবিআরের সদস্য ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সালেহউদ্দিন আহমেদ, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ, আইডিবির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাসিস বিন সুলাইমান, আইএমএফের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট মুহাম্মদ ইমাম হুসাইন, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা ও পরিচালকরা।