গত সপ্তাহে এক পর্যায়ে নিজের উপদেষ্টাদেরও এমন মনোভাবের কথা জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের এ প্রস্তাব নিয়ে গত সোমবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অভিসে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। ওই কথোপকথন থেকে প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের বিরোধিতা সত্ত্বেও সেনা মোতায়েনে ট্রাম্প কতটা মরিয়া সেটা উঠে এসেছে।
আগেই সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ফলে যে কোনও মূল্যে সেই হুমকি কার্যকর করতে চেয়েছিলেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের এ সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিল্লি, অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার রাজধানী শহরে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেন।
এ ব্যাপারে অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াইট হাউসের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে রাজধানী শহরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে অ্যাক্টিভিস্টদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন থেকে সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শহরটির মেয়র। নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একইসঙ্গে বিপুল সামরিক উপস্থিতিকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মেয়র মুরিয়েল বাউজার।
অন্যদিকে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাজধানী ওয়াশিংটনসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচি থেকে বর্ণবাদ, বৈষম্য ও পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে আন্দোলনকারীরা।
রাজধানী ওয়াশিংটনে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। শহরটির ইতিহাসে এটি ছিল স্মরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীদের চাপে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রাজপথ। দোকানপাট বন্ধ রাখেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। উত্তাল বিক্ষোভের মুখে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হোয়াইট হাউসমুখী সব পথ বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজপথে নেমে আসা আন্দোলনকারীদের স্বাগত জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার। তিনি বলেন, এই বিশাল জনসমাবেশ ট্রাম্পকে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
গত সোমবার ট্রাম্পকে একটি গির্জায় পৌঁছে দিতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। তবে ওই গির্জায় গিয়ে কোনও প্রার্থনায় অংশ নেননি ট্রাম্প। ফটোসেশন করেই ফিরে যান তিনি। তবে এর পরদিনই একই স্থানে ফের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।
ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, ওয়াশিংটন ডিসি দখল করতে পারলে তিনি (ট্রাম্প) যে কোনও রাজ্যই দখল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আমরা কেউই নিরাপদ থাকবো না।’
ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস ও সান ফ্রান্সিসকো-র মতো বড় শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’, ‘জর্জ ফ্লয়েড’, ‘আমাদের ঘাড় থেকে তোমাদের হাঁটু সরাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। জর্জ ফ্লয়েডের জন্মস্থান নর্থ ক্যারোলিনায় তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় আন্দোলনকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বর্ণবাদবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশি হেফাজতে হত্যার শিকার হন জর্জ ফ্লয়েড। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে নিরস্ত্র ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ডেরেক চাওভিন নামের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। এই হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে, এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফ্লয়েডের আইনজীবী বলেন, ‘করোনা মহামারিতে ফ্লয়েড জীবন হারাননি। এটি অন্য এক মহামারি। বর্ণবাদ ও বৈষম্যের মহামারি তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।’ সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, আল জাজিরা।