তবে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি মডেলিং গবেষণার তথ্য উপসর্গহীন আক্রান্তদের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ সংক্রমণ ছড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
মারিয়া ভন কেরকোভ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে তাতে দেখা যাচ্ছে, যে সব রোগীর শরীরে করোনার উপসর্গ নেই, তাদের থেকে অন্য কারও শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর হার খুবই কম।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে করোনা ছড়াতেই পারে, তবে সেটা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মুখ্য কারণ নয়। মূলত উপসর্গযুক্ত রোগীদের থেকেই ভাইরাস ছড়াচ্ছে বেশি।
কেরকোভের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর তথ্যের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। সিডিসি বলেছে, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ উপসর্গহীন হতে পারে। সংস্থাটির ধারণা, করোনা সংক্রমণের ৪০ শতাংশ মানুষ অসুস্থ হওয়ার আগেই ছড়াচ্ছে। এর অর্থ হলো তারা প্রাক-উপসর্গহীন।
মঙ্গলবার ভ্ন কেরকোভ বলেছেন, অধিকাংশ সংক্রমণের ক্ষেত্রে আমরা জানি যে লক্ষণযুক্ত মানুষের কাছ থেকে ছড়াচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও উপসর্গহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে ছড়ানোর বিষয়টিও রয়েছে। সত্যিকার অর্থে কতজন মানুষের লক্ষণ নেই তা অনুধাবন করতে আমাদের কাছে এখনও সঠিক জবাব নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি যে কিছু মানুষ উপসর্গহীন বা কিছু মানুষের লক্ষণ না থাকলেও তারা ভাইরাস ছড়াতে পারেন। ফলে জনসংখ্যার কতজন মানুষের উপসর্গ নেই এবং এদের কতজন দ্বারা অপর মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তা পৃথকভাবে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে।
সোমবার ভ্যান কেরকোভ বলেছিলেন, যাদেরকে কোভিড-১৯ উপসর্গহীন বলে মনে করা হচ্ছে প্রায়ই দেখা গেছে তারা হালকা অসুস্থ। তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে উপসর্গহীন আক্রান্তের দিকে তাকাই তাহলে দেখব তাদের অনেকেরই হালকা অসুস্থতা রয়েছে। করোনার লক্ষণের কোনও সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নেই। যার অর্থ হলো হয়ত আক্রান্তের এখনও জ্বর আসেনি, হয়ত তাদের কাশি বেশি হয়নি বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না, কিন্তু তাদের অনেকেরই হয়ত হালকা অসুস্থতা রয়েছে। এটা ধরলে আমরা জানতে পারব প্রকৃত উপসর্গহীন কতজন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে কেরকোভ বলেন, সোমবার প্রেস কনফারেন্সে আমি অল্প দুই বা তিনটি গবেষণার কথা বলেছিলাম। এগুলো উপসর্গহীন আক্রান্তদের গবেষণা করা হচ্ছে। এটি গবেষণার খুব ছোট অংশ। ফলে আমি প্রেস কনফারেন্সে একটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলাম। আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোন নীতি বা এমন কিছু বলছিলাম না। কারণ এই বিষয়ে এখনও অনেক অজানা রয়েছে, কারণ এটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক অজানা বিষয়। অনেক মডেলিং গোষ্ঠী চেষ্টা করছে উপসর্গহীন মানুষ দ্বারা কতজন আক্রান্ত হয়েছেন তা সম্পর্কে ধারণা পেতে।
তিনি আরও বলেন, আমি খুব বিরল শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছি এবং আমি মনে করি এতে করে বিশ্বে উপসর্গহীন সংক্রমণ খুব বিরল ভাবলে তা হবে ভুল বোঝাবুঝি। আমি যা বলছিলাম তা গবেষণার খণ্ডাংশ। অপ্রকাশিত কিছু তথ্যের কথাও তুলে ধরেছি আমি।
তিনি জানান, উপসর্গহীন সংক্রমণ প্রায় ৪০ শতাংশের কথা বলেননি কারণ এগুলো মডেল গবেষণার ধারণা।
সরাসরি প্রচারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সিস প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ড. মাইক রায়ান। তিনিও বলেছেন, করোনাভাইরাসে সম্ভাব্য উপসর্গহীন সংক্রমণ সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানা। আমি নিশ্চিত যে এটি ঘটছে। প্রশ্ন হলো কতটা। এই বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব পেতে হবে, অনেক অজানা রয়ে গেছে।