করোনাভাইরাসের এই সংকটের সময় রাজধানীর ইউনাইটেড এবং আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ এসেছে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি ইউনাইটেড হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্মিত অস্থায়ী ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজন রোগী মারা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে ঢাকার গুলশান থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে একজন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য ১,৭০,০০০ টাকা বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক দেন-দরবার করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১,৫০,০০০ টাকা বিল রাখতে সম্মত হয়। এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে আরো ১,২৭,০০০ টাকা ফিরিয়ে দেয়।
ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল - দুটো ক্ষেত্রেই রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
এছাড়াও অনেক হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা ৬৫ বছরের আরিফা বেগম কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বয়সজনিত কয়েকটি রোগে ভুগছেন। হঠাৎ করে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং চিকিৎসক টেলিফোনে পরামর্শ দেন দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তার বেলায়ও বাধ সাধে করোনা টেস্ট। এভাবে এক সপ্তাহ চলে যায় করোনার ফলাফল পেতে। করোনা নেগেটিভ আসার পরও কোথাও ভর্তি নিচ্ছিল না। একেবারে শেষ পর্যায়ে আরিফা বেগম ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান মহাখালীর একটি মাঝারিমানের হাসপাতালে। এক দিন হাসপাতালে থাকার পর পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মারা যান। মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে আনতে দুই লাখ টাকা বিল করা হয়। কারণ হাসপাতালে ভর্তির সময়ই আরিফার ছেলে বড় অঙ্কের বিলের শর্তে রাজি হয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, বড় বড় এবং নামিদামি হাসপাতালের মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে চলছেন। তারা কথা শোনেন না। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এবং এ মহামারীতে সরকার ও জনগণের পাশের দাঁড়ানোর জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা কোনো কথাই মানছেন না। ওই কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাছে রিপোর্ট রয়েছে। সম্প্রতি ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া রোগীর বিল এবং আনোয়ার খান মডার্নের এক রোগীর ভুতুড়ে বিল নিয়ে বিষয়টি সবার নজরে আসে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু এসব বেসরকারি হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকের ব্যবসার ভাগাভাগি রয়েছে। তাই বছরের পর বছর এ খাতকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যবিদ ও করোনায় গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, জাতীয় দুর্যোগের সময় আমরা দেখছি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো অনৈতিকভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব হাসপাতালের সেবা ও বিলের বিষয়ে অডিট জরুরি। যৌক্তিকভাবে এসব হাসপাতালকে বিল দিতে হবে। আর করোনা চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো কোনোভাবেই অতিরিক্ত বিল নিতে পারবে না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা তাদের দেওয়া হয়। তিনি বলেন, দ্রুত সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনের নিয়ম মানতে এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করাতে হবে। প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সবার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বারবার বলছে, কোনোভাবেই যেন করোনার চাপে অন্য রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন।
জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৬৯টি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে বেসরকারি খাতে শুধু হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে ১০ হাজারের বেশি।