‘ইভটিজিং’ নারী নিগ্রহ উত্যক্ত নির্দেশক কাব্যিক শব্দ মনে হলেও এর পরিধি ও ভয়াবহতা ব্যাপক। ব্যাপক অর্থে ইভ টিজিং বলতে কোনো মানুষকে বিশেষ করে কোনো নারী বা তরুণীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, ভয় দেখানো, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, তার নাম ধরে অকারণে ডাকা এবং চিৎকার করা, বিকৃতি নামে ডাকা, কোনো অশালীন শব্দ করা, শীস দেয়া, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, যানবাহনে বা জনবহুল স্থানে ইচ্ছে করে ধাক্কা লাগানো, কোনো কিছু ছুড়ে দেয়া, ব্যক্তিত্বে লাগে এমন কোনো মন্তব্য করা, ধিক্কার দেয়া, তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা, পথ আগলে দাঁড়ানো, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছাড়া বা কবিতাংশ আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে।
বর্তমানে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে ইভটিজিং এর ধরন পরিবর্তন হয়েছে। এখন মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, হটসঅ্যাপ, ইমো, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা অভিনব কৌশলে ইভটিজিং করা হচ্ছে।
যদিও ইভটিজিং বিষয়টি ৬০ এর দশকে বেশি গুরুত্ব পায় গণমাধ্যমে। কিন্তু এটা আসলে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে ৭০ এর দশক থেকে। যখন অধিক সংখ্যক মেয়েরা বিদ্যালয়ে ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়া শুরু করে।
ইভটিজিং বলতে সাধারণভাবে এখনও আমাদের চোখে একটা চিত্র ভেসে আসে। কিছু মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে আর পাড়ার বখাটে কিছু ছেলে দুটো শব্দ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমায় উড়িয়ে দিচ্ছে বা শিস দিচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে ইভটিজিং বিষয়টা এখানেই সীমাবদ্ধ না। আমাদের সবার আগে উপলব্দি করতে হবে ইভটিজিং এর ব্যাপকতা।
আমরা অনেক শিক্ষিত লোকজনও এই ভুলটা করে বসি। আপনার অফিসে একজন নারী সহকর্মীকে হেয় করে কিছু বললেন সেটা ইভটিজিং। পুরুষ শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীকে অবজ্ঞা করে করে কিছু বললেন, কোনো দায়িত্ব থেকে নারী বলে কাজটি করতে পারবে না এ বিশ্বাসে সরিয়ে রাখলেন- সেটাও ইভটিজিং। বাসে মহিলা সিট খালি নেই বলে তাকে বাসে উঠতে না দেয়া, এমনকি পরিবারের বাবা ঠাট্টার ছলে মাকে বললেন, ‘মহিলারা কম বুঝে’ এটাও ইভটিজিং।
এভাবে প্রতিনিয়ত জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন তৈরি করাও ইভটিজিং।
বর্তমানে গণমাধ্যমে ইভটিজিং এর যে ধরণ এবং মাত্রা দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের সমাজে মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয় হচ্ছে তা প্রকট হয়ে ফুটে উঠছে। ইভটিজিং এর শিকড় অনেক আগে থেকেই আমাদের সমাজে বিদ্যমান ছিল। সেটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে অবশ্য বেশ কিছু বছর আগে থেকে।
ইভটিজিং এর সংজ্ঞা যুগে যুগে পরিবর্তন হয়। আগে যেমন গায়ে হাত না দিলে সেটা ইভটিজিং বলে গণ্য হত না। মূলত ভারতে ৬০ সালেই ইভটিজিং এর কুৎসিত চেহারা প্রকাশ হতে থাকে। তবে মুসলিম প্রধান দেশ প্রাতিষ্ঠানের রাজনীতিবিদ বা নীতিনির্ধারকগণ তা দেখতে বা বুঝতে আরো একটু বেশি সময় নিতে থাকেন।
বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে “দ্যা ঢাকা মেট্রোপলিটিন পুলিশ ইভটিজিং নাম পরিবর্তন করে “ওমেন টিজিং” নাম দিয়ে একে সংজ্ঞায়িত করেন।
তখন থেকে বিষয়টা আইনের দৃষ্টিগোচর হয়। সমাজে ক্রমশ ইভটিজিংয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকে। যেমন তা একসময় পৌঁছে এসিড সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধে।
আজও বুকটার ভিতরে হু হু করে উঠে ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুরে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ৮ম শ্রেণির ছাত্রী রিশার নিথর দেহের ছবি চোখে ভেসে উঠলে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুলে যাওয়ার পথে রিশাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন ঘাতক ওবায়দুল। তেমনি আজও ভুলতে পারিনি ফেনীর নুসরাতের বর্বরতম হত্যার ঘটনা।
এছাড়াও রয়েছে তিশা, সাবরীনসহ অসংখ্যা কিশোরী হত্যার লোহদৃষ্টি ঘটনা যেটার সূত্রপাত ইভটিজিং থেকেই। বর্তমানে ইভ টিজিং প্রতিকারে অনেক ধরণের আইনের প্রয়োগ রয়েছে। যেমন দণ্ডবিধি অনুযায়ী শালীনতার উদ্দেশ্যে কোনো মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি বা কোস কাজ করলে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রমে কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
আবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করে এবং শ্লীলতাহানি করা হলে অনাধিক ১০ বছর কিন্তু ন্যুনতম তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
এছাড়া মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে সংঘটিত বা উদঘাটিত হয়ে থাকলে তখনই অপরাধ আমলে নিয়ে শাস্তি দিতে পারবেন। কিন্তু নেই আইনের দৃষ্টান্তমূলক প্রায় অপরাধ কেবলমাত্র দণ্ড আরোপ করেই কি ইভ টিজিং প্রতিকার করা সম্ভব? এ প্রশ্ন এখন সমাজের সচেতন মানুষের।
সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে আজ পুরুষের পাশাপাশি এক বিরাট অংশ নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ নারীর স্বকীয়তা বিকাশে এবং সফলতার পথে অনেক ক্ষেত্রেই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ইভটিজিং। অনেক সম্ভাবনাময়ী নারী শিশু এবং কিশোরী বয়সেই ঝড়ে যাচ্ছে ইভটিজিং এর মত ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির সংক্রামণ। এ ব্যাধি যাতে মহামারী আকার রূপ নিতে না পারে তাই ইভটিজিং এর প্রতিকার করা আজ সময়েল দাবি।
ইভটিজিং এর ভয়াবহ ছোবল থেকে সমাজকে রক্ষার্থে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে প্রতিটি পরিবার। কারণ পরিবার থেকেই ভালো মন্দের তফাৎ বা নৈতিক শিক্ষার প্রাইমারি ধারণা পেয়ে থাকি আমরা। ছোট সময় থেকেই নৈতিক শিক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে।
এক সময় বাল্য শিখার প্রচলন ছিল, পড়ানো হতো ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’ কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা বিলুপ্তির পথে। বরং অনেক পরিবারের শিশুদের দেখানো হয় পাশ্চাত্য মুভি, Family Politics এ ভরপুর ইন্ডিয়ান সিরিয়াল ও যৌন সুড়সুড়িতে ভরা English Movie.
এ থেকে পরিত্রাণ ঘটাতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে। ইভটিজিং রোধে শিক্ষক সমাজও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তা যেন পরিমল বা হুসনে আরার কার্বন কপি না হয়।
অনেক জ্ঞানপাপী নারীদের পোশাক পরিচ্ছেদ চাল-চলন নিয়ে কথা বলেন। তাদের বলতে চাই, নুসরাত তো হিজাব পড়তো, পোশাকে ছিলো শালীনতাপূর্ণ তাহলে সে কেন ধর্ষিত হলো, এবং তাও ধর্মীয় পোশাকধারী এক হুজুর দ্বারা।
তাই বলতে পারি, মানুষের ধর্মীয় পোশাকের আড়ালেও থাকতে পারে তার বিকৃত মন, বিকৃত চেহারা। আসলে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির আগে পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে অবজ্ঞার চোখে দেখার অবসান ঘটাতে হবে। প্রতিটি পরিবারে ছেলে সন্তান আর মেয়ে সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে, সমান সুবিধে ও স্বাধীনতা দিয়ে বড় করতে হবে যাতে মেয়েদের প্রতি ছোট সময় থেকেইে শ্রদ্ধাবোধ জন্ম নেয়।
নিজের পরিবারের প্রতিটি শিশু এমন ধারণায় অটুট হয়ে বড় হলে সমাজের জন্য অন্য মেয়েদের প্রতি তার সম্মানবোধ গড়ে উঠবে। সে তখন নারীদের নারী নয় একজন মানুষ হিসেবে দেখবে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ইভটিজিং এর শিকার নারীদের অনেকটা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়, ভাবখানা এমন যে তুই ওড়নাটা ঠিকমতো পড়লে বা টি-শার্ট কিংবা ফতুয়া পড়ে বাইরে না গেলে এমনটা হতো না। কিন্তু শাড়ি আর সেলোয়ার কামিজ পড়া মেয়েরাও কি নিগৃত হচ্ছে না?
সুতরাং আমাদের এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পারিবারিক নৈতিকতা শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আছে,‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনী ইসরাঈল- ৩২)
ইভটিজিং আমাদের সমাজে ক্যান্সারের মত বিস্তারের পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্লিপ্ততা ও অনেকখানি দায়ী। প্রায়ই দেখা যায় ইভটিজারদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকে। কিন্তু এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা অপরাধীদের কোনো দল হতে পারে না। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তার শাস্তি অবধারিত এই বিশ্বাসে বলিয়ান হতে হবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে।
ইতিমধ্যে ইভটিজিংয়ের শিকার অনেক তরুণী লজ্জায় ঘৃনায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে আর যারা বেঁচে আছে তাদেরকে সমাজ আড় চোখে দেখছে। ফলে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন আজ কোনঠাসা হয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখছে গৃহকোনে। পরিবারের সদস্যরাও অনেক সময় তাকেই দোষারোপ করে।
এখনও আমাদের সমাজে অনেক নারী নিজ যোগ্যতায় সাফল্য অর্জন করলেও এই সফলতার পিছনে বিভিন্ন চারিত্রিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে তাকে টিজ করা হয়। এ কারণে এখনও অনেক সম্ভাবনাময় নারী কর্মক্ষেত্রে নিজেকে সুযোগ্যভাবে তুলে ধরতে দ্বিধাবোধ করে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ।
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমাজ থেকে ইভটিজিং প্রতিকার করতে হবে সর্বাগ্নে। আর এ কাজে প্রতিটি নারীকে সমবেতভাবে কণ্ঠস্বর তুলতে হবে। নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিটি নারী নিজেকে স্মার্ট বা আধুনিক হতে গিয়ে নিজের মর্যাদা নিজেই ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে নারীকে নগ্ন কিংবা অর্ধনগ্ন করে উপস্থাপণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সংস্কৃতির নামে বিদেশ থেকে আমদানী করা অপসংস্কৃতির মূলোৎপাটন করতে হবে। নৈতিক শিক্ষা ও সৎচরিত্র গঠনের জন্য ব্যাপক ভিত্তিক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন, এনজিও সহ বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে নিতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরও আন্তরিক ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে, দেশের লাখ লাখ ইমাম এবং আলেমদের কাজে লাগাতে হবে; শিক্ষকদের সজাগ ও সচেতন করতে হবে।
নারী ভগ্নি, নারী বধূ তারা ভোগ্য পণ্য নয়, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পাওয়ার মতো আল্লাহ তায়ালার এক অমূল্য নিয়ামত। আমাদের সমাজে এ বিশ্বাসের লালন করতে পারলেই কেবল আমরা ইভটিজিং থেকে মুক্তি পেতে পারি।
এ কয়েক দশক আগেও রাস্তাঘাটে কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার কথা ভাবতেও ভদ্র ঘরের সন্তানরা লজ্জা পেতো। এমন অপরাধের খবর অভিভাবকের কানে গেলে নিজ হাতে সন্তানকে শাস্তি দিতেন। প্রতিটি পাড়ায় সামাজিক শাসন ছিল। পাড়ার মুরুব্বিরা কারোও সন্তানকে অপরাধ করতে দেখলে শাসন করতো। এখন এমন চিত্র বিরল। তাইতো ইভটিজিং এর ব্যাপকতা বেড়ে গেছে।
এখন কেবল রাস্তাঘাটে স্কুল কলেজ নয়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মেয়েরা নিরাপদ নয়। এ ভয়ংকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায় জাতি, নারীরা তাদের সম্মানের আসনে থাকবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। অতীতেও যে নারীদের সাথে এমনটা ঘটতো না তা কিন্তু নয়।
তবে বর্তমানে নারীরা এগিয়ে আসছে, প্রতিবাদী হচ্ছে, আইনের শরণাপন্ন হচ্ছে, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলছে তাই আমরা অনেক ঘটনাই বেশি জানতে পারছি। অতীতে এমন অনেক জঘন্য অপরাধ অনেক নারীই নীরবে নিভৃতে মুখ বুজে সহ্য করেছে। অনেক ঘটনাই লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে যা ভুক্তভোগীকে তিলে তিলে নিংশেষ করে দিয়েছে।
আজ সেই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছে। তার পাশে আছে তার পরিবারের সদস্য, আছে নারীবাদী সংগঠনগুলো, আছে নারী শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অঙ্গ- সংগঠন।
সর্বোপরি বর্তমান নারীবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে নিয়েছেন নানামূখী কর্মসূচি যা নারীকে করেছে আরও আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বাবলম্বী।
এতকিছুর পরেও ইভটিজিং এর মতো দুষ্ট সামজিক ব্যাধি প্রায়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমাজের কোথায়ও কোথায়ও চরমভাবে। বিনাশ করে দেয় সম্ভাবনাময় কিছু জীবনকে। নীরবে নিভৃতে অন্তরায় হয়ে থাকে কোন কোন সম্ভাবনা বিকাশের পথে। ইভটিজিং এর এই বিষবৃক্ষকে সমূলে বিনাশ করতে না পারলে রাষ্ট্রের এক বিরাট সম্ভাবনার উৎস নারীর সাবলীল সফলতার পথ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। যা একটি জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে অশনী সংকেত।
পরিশেষে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়া, ইভটিজিং প্রতিকারে প্রতিটি পরিবারকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। ছেলে-মেয়ে বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তান কোথায় কী করছে তা আপনাকে অবশ্যই জাবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সন্তান বিশেষ বয়সে উপনীত হলে অবশ্যই তার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তার সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করে কাউন্সিলিং করতে হবে। সেই সথে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করার মহান ব্রত নিয়ে মনোবিদ বা শিক্ষক সমাজের পরিচ্ছন্ন ইমেজ আছে এমন মানুষরা এগিয়ে আসতে পারেন।
লেখক : মোসা. সেলিনা আকতার। সহকারী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, পটুয়াখালী।