মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকালে সচিবালয়ে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত পাম ভিয়েট চিয়েনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, শুধু জরিমানা নয়, সার কারসাজিতে জড়িত ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। লাইসেন্স দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সেজন্য, লাইসেন্স বাতিলের জন্য তাদের নাম শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সারের মজুতে কোন সমস্যা নেই। গুদামে পর্যাপ্ত সার রয়েছে। একইসাথে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বরাদ্দও বেশি দেয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও কোথাও সারের সংকটের কথা শুনা যাচ্ছে। এটি হতে পারে না। ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসন বা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারো গাফিলতি পাওয়া গেলে-তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এমওপি সার প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান,আগস্ট মাসে আজকে পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত ১ লাখ ৮০ হাজার টন এমওপি সার দেশে পৌঁছেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ১৬ হাজার টন সার দেশে পৌঁছবে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরে ৫১ হাজার টন ও অক্টোবরে ৭০ হাজার টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। ফলে চাহিদার চেয়ে মজুত অনেক বেশি থাকবে।
উল্লেখ্য, চাহিদার বিপরীতে দেশে সব রকমের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বর্তমানে (২৫ আগস্ট) ইউরিয়া সারের মজুত ৬ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন, টিএসপি ৩ লাখ ৯৪ হাজার টন, ডিএপি ৮ লাখ ২৩ হাজার টন, এমওপি ২ লাখ ৭৩ হাজার টন। সারের বর্তমান মজুতের বিপরীতে আমন মৌসুমে (আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত) সারের চাহিদা হলো ইউরিয়া ৬ লাখ ১৯ হাজার টন, টিএসপি ১ লাখ ১৯ হাজার টন, ডিএপি ২ লাখ ২৫ হাজার টন, এমওপি ১ লাখ ৩৭ হাজার টন। বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও সারের বর্তমান মজুত বেশি।
চালের দাম শিগগিরই কমবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আনা হচ্ছে। জিটুজি ভিত্তিতে এ চাল আনা হচ্ছে। চাল আসতে ১৫-২০ দিন লাগতে পারে। এছাড়া, রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম আনা হচ্ছে। অন্যদিকে, দেশে প্রায় ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হবে। এছাড়া, টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ৩০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ করা হবে। ওএমএসেও চাল বিক্রি করা হবে। সব মিলিয়ে চালের দাম শিগগিরই কমবে।
এর আগে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকে দুদেশের কৃষি সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত পাম ভিয়েট চিয়েন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কৃষি সহযোগিতার জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করার প্রস্তাব প্রদান করেন। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কৃষি সহযোগিতা রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতার ফলে ভিয়েতনামের কৃষি উন্নত হয়েছে। যেহেতু তিনটি দেশই ডেল্টা, কাজেই তাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় সবপক্ষই উপকৃত হবে।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত জানান, কাজুবাদাম রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বর্তমানে প্রথম এবং কফি রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কাজুবাদাম-কফি রপ্তানির ৫০% সে দেশে উৎপাদিত হয়, বাকীটা ভারত ও আফ্রিকার দেশসমূহ থেকে এনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
বাংলাদেশে কাজুবাদাম ও কফির চাষ সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী এক্ষেত্রে ভিয়েতনামের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন,গত ২ বছরে আমরা ২০ লাখ কাজুবাদামের চারা কৃষকদেরকে দিয়েছি। ইতোমধ্যে এসব গাছে কাজুবাদামের ফলন শুরু হয়েছে। আশা করছি, কাজুবাদাম উৎপাদনে বাংলাদেশও ভাল করবে।