বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি জুনের ২৩ দিনেই গত বছরের পুরো জুন মাসের (৩০ দিনের) তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম ২৩ দিনে (১ জুন থেকে ২৩ জুন) প্রবাসীরা ১৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের পুরো জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সাত দিন বাকি থাকতেই (গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে এই বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত) অর্থাৎ বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২৩ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার (১৭.৭৭ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়েও ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার (১৬.৪১ বিলিয়ন)। আর এই রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে। বুধবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে এত বেশি রিজার্ভ আর কখনও ছিল না।
করোনা মহামারির সময়ে প্রবাসী আয় বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা-বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘পৃথিবীর সবদেশের অবস্থাই খারাপ। বাংলাদেশের মানুষের হাতের টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা তাদের জমানো সব টাকা এখন বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। এ কারণে প্রবাসী আয় বাড়ছে।’
এদিকে আগামীতে কিছুদিনের মাঝেই রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে বড় পতনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। সংস্থাটি বলছে, করোনার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় মাধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা অভিবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। এর বড় কোপ পড়ছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই করোনার সময়ে প্রবাসীরা যত রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, এর আগে কখনোই কোনও অর্থবছরের পুরো সময়েও এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ (১.৫) বিলিয়ন ডলার। তাতে ১১ মাসেই রেমিট্যান্সের পরিমাণ গত পুরো অর্থবছরের প্রায় সমান হয়ে গিয়েছিল। এখন তা গত অর্থবছরকে ছাড়িয়ে গেলো।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের যে নতুন বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতেও প্রবাসীদের জন্য ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অবশ্য গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। পরের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স আরও কমে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। কিন্তু মে মাসে চিত্র পাল্টাতে থাকে। মে মাসের প্রথম ১১ দিনে ৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, ৩১ মে মাস শেষে সেই রেমিট্যান্স গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। আর জুনের প্রথম ১৮ দিনেই ১২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। বুধবার (২৪ জুন) দিন শেষে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।