এসএমই ব্যাংকিং, উইমেন ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং, বৈদেশিক রেমিট্যান্স সেবার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষদেরকে আর্থিক খাতের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। সাথে সাথে ব্যাংকিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদেরকে সম্যক ধারণা দেয়া হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ‘উঠান বৈঠক’ আয়োজন করা হচ্ছে। এসব বৈঠকে নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এসএমই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের ব্যবসার লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ, বুককিপিং ও ঋণ পাবার জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে।
উইমেন ব্যাংকিংয়ের আওতায় নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের প্রতিনিধিদের ব্যাংকিংয়ে ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৈধ পথে পাঠাতে উৎসাহিত করতে দেশে ও বিদেশে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা কিভাবে যথাযথভাবে বিনিয়োগ করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত মুন্ডা জাতিগত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে সচেতন করতে ‘উঠান বৈঠক’-এর আয়োজন করা হয়েছে। এখানে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সঞ্চয়ের গুরুত্ব এবং এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে প্রদানকৃত সেবাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের ‘উঠান বৈঠক’-এর আয়োজন করা অব্যাহত আছে।
দেশের নারীদের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে বিশেষায়িত ব্যাংকিং ‘তারা’ চালু করে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নারীদের পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে ব্র্যাক ব্যাংক ‘তারা’। ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি নারীদের জন্য বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ও প্রশিক্ষণ সেশনের আয়োজন করে ‘তারা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাথে আয়োজন করা হয়েছে উদ্যোক্তা এক্সেলেরেটর প্রোগ্রাম। এর আগে আমেরিকান ব্যাবসন কলেজ এবং ডাচ এফএমও এর সহায়তায় নারী ফিচার উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। নারীদের পরিচালনার দক্ষতা বাড়াতে ও ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে এ প্রশিক্ষণ সাহায্য করেছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ পথে টাকা পাঠাতে ও দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া সহ আরও অনেক দেশে সচেতনতা কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে থেকেই অনলাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ডিজিটাল রেমিট্যান্স, ‘আস্থা’ অ্যাপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো ইত্যাদি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। দুবাইতে নিযুক্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আবু নাসের এবং দক্ষিণ
কোরিয়াতে নাহিদ সুলতানা রিতু এসব সেশন পরিচালনা করছেন। রেমিট্যান্স গ্রহিতাদের ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কে সচেতন করতে দেশের নানা জেলায় ‘রেমিটেন্স গ্রাহক সমাবেশ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে ব্র্যাক ব্যাংক। অনুষ্ঠানে গ্রাহকদের প্রবাসী প্রোডাক্টস, সঞ্চয়, বিনিয়োগ সুবিধা ও ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
এসব অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর উপর জোর দেন, কেননা এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধি পায় এবং তা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রিমিট্যান্সের ক্ষেত্রে গ্রহীতারা সরকারের প্রদত্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা পান। এছাড়া তাদের প্রিয়জনদের পাঠানো টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগে তাদেরকে উৎসাহিত করেন। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ কার্যক্রম: ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে গবাদিপশু খামারি ও ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিংয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ও ডিজিটাল পেমেন্টে সচেতন করার উদ্যোগ নেয় ব্র্যাক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় গবাদিপশু খামারিদের ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। উত্তরা ও কাওলা পশুর হাটে পিওএস, অ্যাপ, কিউআর কোড, এমএফএস এবং
এজেন্ট ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদান করা হয়। এছাড়া সোসাল মিড়িয়ায় অডিওভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে ব্যাংকিং ও আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ে সাধারণ মানুষের
মধ্যে সচেতন সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ কেসিএসজি-এর স্বপ্ন ধারণ করে ব্র্যাক ব্যাংক ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নানা জনমুখী উদ্যেগের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষদের কাছে আর্থিক তথ্য ও জ্ঞান পৌঁছে দিতে ব্র্যাক ব্যাংক বদ্ধপরিকর।