বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রকল্পের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণ হচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও একটি নতুন মাইলফলক হবে। দুটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তাবায়নে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।এর আগে যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণে ২০১৬ সালে প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তখন প্রাক্কলন খরচ ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকে ব্যয় বাড়ার যে অনুমোদন দিয়েছি সেটা শর্তসাপেক্ষে। এ প্রকল্পটি আবার একনেকে যাবে, আবার ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) করতে হবে। নতুন ডিপিপির ভিত্তিতে কাজটি এগিয়ে যাবে। একনেকে আবার অনুমোদনের পর ক্রয় কমিটি যেনো আবার আসতে না হয়, সেজন্য আজকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাপানভিত্তিক দুই প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডি-১ ওটিজে জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজে আইএইচআই এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার সর্বনিম্ন দাতা হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কাজে গতি আনতে চাই। এজন্য পদ্ধতি সহজ করতে হবে। আজকে যদি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দিয়ে দিতাম, তাহলে আবার একনেকে নিতে হতো। একনেক অনুমোদন দিলে আবার ক্রয় কমিটিতে আনতে হতো। এ প্রকল্প একনেক প্রথমে অনুমোদন দিয়েছে। অনেক ব্যয় বেড়েছে। তাই আবার একনেকে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এটা দেখা উচিত। দেখে যদি উনি অনুমোদন দেন, তারপর ওকে। একনেক অনুমোদন না দিলে হবে না।
ব্যয় বাড়ার করণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজের পরিমাণ বেড়েছে। তবে কী ধরনের কাজ বেড়েছে সেটা তিনি বলেননি। এই বিষয়ে তিনি জানান, এটা একনেকেই আলোচনা হওয়া ভালো। ব্যয় বাড়ার পুরোটির ক্ষেত্রেই জাইকা আর্থিক সহায়তা দেবে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সেতু। যা দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। সেতুটি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। ভারত, মিয়ানার, ভুটান ও নেপালসহ উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো; ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে অনুমোদিত ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র’ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলায় ৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার ও তৎসংলগ্ন সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের প্যাকেজ নম্বর-এনডব্লিউ-০৫’র ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৪ কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯৪ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন করবে দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেড। একই প্রকল্পের আওতায় (প্যাকেজ নম্বর-এনডব্লিউ-০৭) পিরোজপুরে ৫০টি সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করবে রাফিয়া কন্সট্রাকশন লিমিটেড ও মেসার্স এসবি ট্রেডার্স। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩১৯ কোটি ৫০ লাখ ১৩ হাজার ৯৫০ টাকা।
আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৫টি পার্টনারশিপ এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকালে ওই প্রকল্পের পূর্ববর্তী প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত এনজিও/সংস্থার ৭ মাস মেয়াদে (জানুয়ারি-জুলাই, ২০১৯) পার্টনারশিপ চুক্তি বর্ধিতকরণ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পোপালগঞ্জ পৌরসভার সঙ্গে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩২ টাকায় পার্টনারশিপ চুক্তি ভূতাপেক্ষভাবে বর্ধিত করার জন্য কমিটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ)’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় কন্ডাক্টর, এসিএসআর ও বেয়ার কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দরপত্রে ছয়টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবিএস কেবলস লিমিটেড কাছ থেকে ২৩ হাজার ২০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর, এসিএসআর ও বেয়ার সংগ্রহ করবে। এজন্য ব্যয় হবে ৯৪ কোটি ৭০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৪০ টাকা।
পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলাধীন জগন্নাথকাঠি, চান্দকাঠি জিসি সড়কে (রোড আইডি: ৫৭৯৮৭২০০১০১) ১৫ হাজার ৩৫০ মিটার চেইনেজে কালিগঙ্গা নদীর ওপর ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ’ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এনবিআর কর্তৃক ভ্যাট বাড়ায় প্রকল্পে ভেরিয়েশন বাবদ ৪ কোটি ১১ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৫ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১৯ কোটি ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৬ টাকায়।
এছাড়া বৈঠকে চট্রগ্রাম জেলায় ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করবে সরকার স্টিল লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৭৫ লাখ ১ হাজার ১৭৮ টাকা। আইডিএ’র অর্থায়নে প্যাকেজ নম্বর-এনডব্লিউ-০৩-বি’র অধীনে চট্রগ্রাম জেলায় আরও ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের কাজ পেয়েছে সরকার স্টিল লিমিটেড। ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৬০ টাকা।
বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘প্রকিউরমেন্ট অব ৩৫ কমার্শিয়াল অ্যান্ড অক্সিলারি ভেসেল অ্যান্ড কন্সট্রাকশন অব ২ নিউ স্লিপওয়ে ফর বিআইডব্লিউটিসি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬টি কে টাইপ (মিডিয়াম টাইপ) ফেরি নির্মাণ ও সরবরাহ কাজের দরপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চট্রগ্রামের কর্ণফুলি বিল্ডার্স লিমিটেড ফেরিগুলো নির্মাণ ও সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৩৯ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৪ টাকা।