উচ্চ সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ বছর প্রবৃদ্ধি কমবে বিশ্ব অর্থনীতির। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে উন্নত দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে সীমিত। সেক্ষেত্রে এবার বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৩ সালে এটি আরও কমে ২ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াবে।
ওইসিডি মহাসচিব ম্যাথিয়াস কোরম্যান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এটা সত্য যে আমরা দুনিয়াজুড়ে মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছি না। তবে এটি খুব চ্যালেঞ্জিং একটি দৃষ্টিভঙ্গি। আমি মনে করি না যে, ২ দশমিক ২ শতাংশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কারও জন্যই স্বস্তিদায়ক হবে।’
৩৮টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত ওইসিডি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে। সংস্থাটি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ হাজির করে থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে। এর ফলে ওইডিসির সদস্য দেশগুলোকে তাদের ইকোনমিক আউটপুটের ১৮ শতাংশ জ্বালানিতে ব্যয় করতে হয়েছে। এটি পুরো দুনিয়াকে জ্বালানি সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। জ্বালানির উচ্চ দাম মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ওইসিডি মহাসচিব ম্যাথিয়াস কোরম্যান বলেন, বহু দেশে সরকার সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিলেও পরিবারগুলোর প্রকৃত আয় কমেছে।
ওইডিসি বলছে, উচ্চ সুদের হারসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম আক্রমণাত্মক পথে হেঁটেছে। তারা এ বছর ছয় বার বেঞ্চমার্ক রেট বাড়িয়েছে। কিন্তু এর উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি মার্কিন অর্থনীতিকে প্রায় স্থবির করে দেবে।
২০২১ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৯ শতাংশ। তবে ওইডিসি বলছে, এ বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদের আশঙ্কা, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র অন্তত একটি হালকা মন্দায় প্রবেশ করবে। তবে ওইসিডির তরফে সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করেনি। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেলেও আগামী দুই বছরও এটি ফেডারেল রিজার্ভের দুই শতাংশ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি থাকবে।
ওইসিডি বলছে, আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার উদীয়মান বাজারের দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। সংস্থাটির ধারণা, আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির তিন-চতুর্থাংশই আসবে এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে। স্থবির হয়ে পড়বে মার্কিন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতি।
ভারতের অর্থনীতি এই বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরের বছর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছর চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এটি ৪ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হবে। করোনার পাশাপাশি আবাসন খাতের দুর্বলতা দেশটির বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে।