আধুনিক ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত কিছু বিধান নিম্নে তুলে ধরা হলো
► গ্রন্থস্বত্ব/প্রকাশনা স্বত্ব বিক্রি করা ও তার বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ।
► বিনা অনুমতিতে অন্য প্রকাশকের বই প্রকাশ করা জায়েজ নয়।
► রক্ত বিক্রি করা জায়েজ নয়। তবে দুই অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েজ—
১. যদি রক্ত দেওয়া ছাড়া রোগীর জীবনের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের দৃষ্টিতে রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবন বাঁচানোর আর কোনো পথ না থাকে।
২. অভিজ্ঞ ডাক্তারের দৃষ্টিতে রক্ত দেওয়া ব্যতীত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা যদি না থাকে। তাহলে এরূপ রোগীকে রক্তদান করা জায়েজ এবং রোগীর জন্যও এ অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েজ এবং প্রথম অবস্থায় তাকে বিনা মূল্য রক্ত দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে তার জন্য রক্ত ক্রয় করা জায়েজ। তবে বিক্রি করা জায়েজ নয়।
► মানুষের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (যেমন—চোখ, চোখের কণিকা, কিডনি ইত্যাদি) বিক্রয় করা জায়েজ নয়।
► বোনাস ভাউচার বিক্রি করা জায়েজ নয়।
► পেনশন বিক্রি করা জায়েজ নয়, তবে সরকারের কাছে বিক্রি করা জায়েজ।
► পায়খানা বিক্রি করা জায়েজ নয়, তবে মাটি হয়ে গেলে এবং মাটি প্রবল হয়ে গেলে বিক্রি করা জায়েজ।
► গোবর বিক্রি করা জায়েজ। কিস্তিতে বেশি মূল্যে হলেও ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ, তবে পূর্ণ কিস্তি পরিশোধ না করলে বিক্রীত দ্রব্য ফেরত গ্রহণ ও বিগত প্রদত্ত কিস্তিতে টাকা বাজেয়াপ্ত করার শর্ত আরোপ করা হলে সেরূপ বিক্রি নিষিদ্ধ।
► ক্রেতা ক্রয় করতে অস্বীকার করলে জমি ইত্যাদির বায়নার টাকা ফেরত দেওয়া জরুরি। তবে বায়না করার পর বিক্রেতার সম্মতি ছাড়া ক্রেতার ক্রয় করতে অস্বীকার করার অধিকার নেই।
► টেলিভিশনে ক্রয়-বিক্রয় মাকরুহ।
► মদ, গাঁজা, হেরোইন প্রভৃতি ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ নয়। আফিম যেহেতু ওষুধে ব্যবহূত হয়, তাই বিক্রয় করা জায়েজ, তবে যে এটা দ্বারা নেশা করবে বলে প্রবণ ধারণা থাকে তার কাছে বিক্রি করা মাকরুহ তাহরিমা ও নাজায়েজ।
► বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করা জায়েজ, তবে বিড়ি-সিগারেট সেবন যেহেতু মাকরুহ তাই এগুলো বিক্রি করা মাকরুহ কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর। অতএব এ থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
► ছেঁড়া-ফাটা টাকার (নোট) বদলে ভালো টাকা (নোট) কম-বেশি করে বদলানো দুরস্ত নয়।
► বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয় না জায়েজ।
► বিধর্মীদের বইপত্র, বাতিলপন্থীদের বইপত্র বিক্রয় করা জায়েজ নয়।
► চোরাইভাবে আমদানীকৃত মালামাল আটক করা হলে তা ক্রয় করা জায়েজ নয়। কারণ সরকার সেগুলোর মালিক নয়।
► ডিপো হোল্ডারের পক্ষে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য গ্রহণ করা জায়েজ নয়।
► বর্তমানে প্রচলিত কোটা ও প্যাকেট বিভিন্ন মালের যে ওজন লেখা থাকে সেই ওজন ধরে নিয়ে ওই মাল ওই ওজনের মূল্য বিক্রয় করা জায়েজ। গ্রাহককে মেপে দেওয়া জরুরি নয়।
► প্রাইজবন্ড ক্রয় করা জায়েজ নয়।
► সুদভিত্তিক ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত ফিক্সড ডিপোজিড, ডিপোজিড পেনশন স্কিম প্রভৃতি পদ্ধতিতে অর্থ বিনিয়োগ করা বৈধ নয়, কারণ এগুলো সুদের হিসাবে পরিচালিত।
► বৈদেশিক মুদ্রা যেমন ডলার, পাউন্ড ইত্যাদি সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ।
► যখন কোনো কম্পানির শেয়ার প্রাথমিকভাবে ইস্যু হয় তখন তা ক্রয় করা জায়েজ এই শর্তে যে ওই কম্পানির মূল্য কারবার হারাম হতে পারবে না। যেমন ইনস্যুরেন্স কম্পানি বা সুদভিত্তিক ব্যাংক বা মদের ফ্যাক্টরি ইত্যাদি হতে পারে না।
► স্টক মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও শেয়ার ব্যবসা চারটি শর্তে জায়েজ। যথা :
১. যে কম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হবে সেটা মৌলিকভাবে হারাম কারবার করে না।
২. কম্পানির কিছু স্থায়ী সম্পত্তি থাকতে হবে, যেমন: বিল্ডিং, ভূমি ইত্যাদি। যার সম্পূর্ণ পুঁজি এখনো তরল সম্পদে রয়ে গেছে তার শেয়ার ফেস ভ্যাল্যু থেকে কম বা বেশিতে বিক্রি করা জায়েজ নয়।
৩. কম্পানি কোনো সুদি লেন-দেনের সঙ্গে জড়িত থাকলে বার্ষিক মিটিংয়ে সুদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে, যদিও তার আওয়াজ অগ্রাহ্য হয়ে যায়।
৪. মুনাফা বণ্টন হওয়ার সময় যতটুকু সুদি ডিপোজিট থেকে অর্জিত হবে ততটুকু সদকা করে দিতে হবে, তা ভোগ করতে পারবে না। মুনাফা এর কত হার সুদি ডিপোজিট থেকে অর্জিত হয় তা কম্পানির ইনকাম স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়।
► কারো নামে শেয়ার বরাদ্দ হওয়ার পর শেয়ার সার্টিফিকেট ডেলিভারি পাওয়ার আগেও তা ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ।
► ডিবেঞ্চার ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ নয়। কারণ তা সুদভিত্তিক।
► বাণিজ্যিক নাম ও ট্রেডমার্ক বিক্রি করা জায়েজ তিন শর্তে—
১. ওই আইন ও ডেনমার্ক সরকারি আইনে রেজিস্টার্ড হতে হবে।
২. ওই নাম ও ট্রেডমার্ক ক্রয়কারীকে ঘোষণা দিতে হবে যে এখন থেকে এ নাম ও ট্রেনমার্ক আগের অমুক ব্যক্তি ও অমুক প্রতিষ্ঠান দ্রব্য তৈরি ও বাজারজাত করবে না বরং অন্যরা করবে।
৩. ওই নাম ও ট্রেনমার্ক ক্রয়কারী যথাসাধ্য পণ্যের সাবেক মান রক্ষা করার আরো বেশি মানসম্পন্ন দ্রব্য উত্পাদন করার চেষ্টা করবে।
► ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট লাইসেন্স ও যেকোনো বাণিজ্যিক লাইসেন্স বিক্রি করা জায়েজ, যদি রাষ্ট্রীয় আইনে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে।
► ইনডেন্ডিং বিজনেস বা কমিশন এজেন্সির কারবার বৈধ। এটা দুই ধরনের হতে পারে—
১. এজেন্ট মূল কম্পানি থেকে মাল ক্রয়-বিক্রয় করবে এবং কম্পানি থেকে শতকরা পারসেনটিজ গ্রহণ করবে। এটা জায়েজ এই শর্তে যে প্রথমে এজেন্টকে মাল হস্তগত করতে হবে তারপর ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। নিজের গাড়ি, লরি, ট্রাক ইত্যাদিতে মাল বুঝে নেওয়াও হস্তান্তর করার শামিল। হস্তগত করার আগে বিক্রি করা বৈধ নয়, ক্রেতা প্রস্তুত করে ক্রেতাকে কম্পানির গোডাউনে নিয়ে যাওয়া হলো আর ক্রেতা তার নিজস্ব গাড়িতে/মাল বুঝে তুলে নিয়ে এলো। এ ক্ষেত্রে যেহেতু এজেন্ট মাল হস্তগত করার আগেই বিক্রি করল, তাই এটা জায়েজ নয়। এলসি খুলে বিদেশ থেকে মাল আনা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিদেশস্থ শাখা কর্তৃক মাল বুঝে গ্রহণ করা নিজের হস্তগত করার শামিল।
২. কখনো যদি এ রকম হয় যে এজেন্ট শুধু ক্রেতাদের উত্সাহিত ও প্রস্তুত করে এবং সে ক্রেতারা সরাসরি মূল কম্পানির সঙ্গে ক্রয়ের চুক্তি করে। আর ক্রেতাদের এই উত্সাহিত করার বিনিময়ে কম্পানির এজেন্টকে শতকরা হারে কিছু বেনিফিট দিয়ে থাকে। এ পদ্ধতিও বৈধ। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)
আহকামে জিন্দেগি অবলম্বনে