উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গের করোনা আক্রান্তরা কী করবেন?

উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গের করোনা আক্রান্তরা কী করবেন?
প্রতিদিন নতুন করে দু’হাজারের বেশি মানুষ নভেল করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। এদিকে মহামারি সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিত্যনতুন নানা ভয়ঙ্কর নানা তথ্য জানাচ্ছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীমহল। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বিশেষজ্ঞদের মতে এই ভয়ানক ভাইরাস নাকি ৪৯ দিন পর্যন্ত মানুষের শরীরে লুকিয়ে বসে থাকতে পারে। তবে সংক্রামক রোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, তা নয়। অল্পবিস্তর উপসর্গ থাকলে বাড়িতে আলাদা থেকে চিকিৎসা করা উচিত। এর ফলে যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করা একান্ত দরকার, তাঁদের এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল করে ছুটে বেড়াতে হবে না।

অধিকাংশ চিকিৎসক করোনা সংক্রমণ হলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে অত্যন্ত মৃদু উপসর্গ থাকে। তার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হয় না। ১৫ শতাংশ রোগীর উপসর্গ বেশি মাত্রায় হয় এবং শ্বাসকষ্ট থাকায় তাঁদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।

মাত্র ৫ শতাংশ রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয় বলে তাঁদের ভেন্টিলেটর দিয়ে চিকিৎসা করা দরকার হয়। এই মুহূর্তে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, সেই অনুযায়ী হাসপাতালের পরিকাঠামো ও শয্যার যথেষ্ট অভাব আছে।

সামান্য উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় জমালে একদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপ ভয়ানক বেড়ে যাবে অন্যদিকে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে করেন চিকিৎসকগণ। এই কারণেই অল্পবিস্তর উপসর্গ থাকলে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ৫ শতাংশ অত্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

করোনা সংক্রমণজনিত অসুখ অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতই। যেহেতু এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধের খোঁজ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তাই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়।

বাড়ির কোনও সদস্য করোনা আক্রান্ত হলে অন্যদের টেস্ট করিয়ে পজিটিভ এলে এবং বিশেষ কোনও উপসর্গ না থাকলে অর্থাৎ অ্যাসিম্পটোম্যাটিক হলে তাঁরও হাসপাতালে আসার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে রোগীর বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হলে এবং অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে অথবা ক্রনিক কিডনির অসুখ কিংবা হার্টের সমস্যা থাকলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত, এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞগণ। তবে এই প্রসঙ্গে একথাও মনে রাখা উচিত কোনও কোনও রোগী অ্যাসিম্পটোম্যাটিক হলেও পরবর্তী কালে উপসর্গ শুরু হতে পারে।

কার বেশি বা কম উপসর্গ দেখা দেবে তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল। ৫–১৪ দিনের মধ্যে কারও কারও হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই প্রসঙ্গে সংক্রামক বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, অনেক সময় অনেকের হালকা উপসর্গ থাকলেও রোগী ডিনায়াল মোডে থাকেন। অর্থাৎ তিনি মনে করেন আমি অমুক ওষুধ খেয়েছি বা আমার ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি। তাই অল্প উপসর্গ হলেও গ্রাহ্য করেন না। এ ক্ষেত্রে আচমকা রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই সামান্য সমস্যা হলে রুটিন করোনা টেস্ট করানো উচিত বলে চিকিৎসকদের পরামর্শ।

কী কী উপসর্গ
গলা ব্যথা,
হালকা জ্বর,
মাথা ও গা হাত-পা ব্যথা,
শুকনো কাশি,
গা ম্যাজম্যাজ করা,
গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া
পেটে ব্যথা
ডায়ারিয়া
বমি ও বমি বমি ভাব
ত্বকে র‍্যাশ
চোখ লাল

এই ধরনের উপসর্গ দেখলে অবশ্যই করোনা টেস্ট করান।

বাড়িতে থাকলে যে সব নিয়ম মানতে হবে
বাথরুম সংলগ্ন আলাদা ঘরে থাকতে হবে
স্নান বা অন্য কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না
বাড়িতে থাকলেও ঘুম ও গোসলের সময় বাদে থ্রি লেয়ার যুক্ত মেডিক্যাল মাস্ক পরে থাকতে হবে, টানা আট ঘণ্টা মাস্ক পরার পর মাস্কটিকে জীবাণুমুক্ত করে কেটে টুকরো করে পেপার ব্যাগে করে ফেলে দিতে হবে।

কখনওই টি জোন অর্থাৎ মুখে নাকে বা চোখে হাত দেবেন না
নিজের প্রত্যেক দিনের উপসর্গ খাতায় লিখে রাখুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, শরবত, সুপ, ফল খেতে হবে
মনের জোর বজায় রাখতে সচেতন হতে হবে। ভাল বই পড়ুন, গান শুনুন। বাড়ির মানুষ বা কাছের বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলতে পারেন
নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, কোনও উপসর্গ বাড়লে জানান
পালস অক্সিমিটারে নিয়ম করে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে হবে দিনে ৪–৫ বার। ৯৫ এর থেকে কম হলে চিকিৎসককে জানান।
সুস্থ বোধ করলেও ১৪ দিন এই ভাবে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
নিয়মিত তাপমাত্রা মাপতে হবে গায়ে জ্বর না থাকলেও।

কখন হাসপাতালে যেতে হবে
বাড়িতে থাকা অবস্থায় যদি লক্ষ্য করেন
জ্বর বাড়ছে, অন্যান্য উপসর্গ কমছে না বরং বাড়ার দিকে
ভয়ানক ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করছেন
শ্বাসকষ্ট হচ্ছে
বুকে চাপ ভাব বোধ করছেন
মানসিক স্থিতাবস্থা চলে যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই বাড়ির সদস্যদের বলে সরকারি স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

করোনা নিয়ে সতর্ক থাকুন কিন্তু অকারণে আতঙ্ক তৈরি করবেন না। সংক্রমণ আটকাতে সঠিক মাস্ক সঠিক ভাবে পরুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন,ভাল থাকুন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

চার ভুলেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
নবজাতকের চোখে পুঁজ হলে করণীয়
জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?
সকালের চার ভুলেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
দেশি সবুজ মাল্টার যত উপকারিতা
সন্তানের সামনে ভুলেও যেসব আচরণ করবেন না
ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে যেসব ব্যায়ামে
কর্মীদের চাপে রাখলে কি অফিস লাভবান হয়, নাকি ক্ষতিগ্রস্ত?
এয়ার কুলারের বাতাস এসির মতো ঠান্ডা হবে ৩ কৌশলে
কিডনি ড্যামেজ হওয়ার ৬ লক্ষণ