বাংলাকে শকুনমুক্ত করতে স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয় ১৯৬৬ সালে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে বৈষম্যের শিকার বাঙালি পায় নতুন নির্দেশনা।
আগরতলা মামলা, নির্বিচারে গ্রেফতার এবং ছাত্রদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে হয় ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান। অভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় আইয়ুব সরকার। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন আইউব খান।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার চেতনাকে আরও বেশি জাগ্রত করে গণঅভ্যুত্থান। ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর আইনশৃঙ্খলার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে। শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী। এর জের ধরে শুরু হওয়া তীব্র রাজনৈতিক সংকট শেষ পর্যন্ত গড়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ জাতিকে অনুপ্রাণিত করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।
একাত্তরের ২৫শে মার্চ কালোরাতে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে পরিচালনা করে অপারেশন সার্চলাইট। এই অপারেশনে গণহত্যায় মেতে ওঠে পাক হানাদাররা। গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরিকল্পিত গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বীর বাঙালি। স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালিরা দেশকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কব্জা থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী।
মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। দেশকে স্বাধীন করতে জীবন দেয় ৩০ লাখ শহীদ। অপ্রতিরোধ্য বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নিয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পন করে পাকিস্তানিরা। সমাপ্ত হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। শকুনমুক্ত হয় বাংলা, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের বাংলাদেশ।