নতুন বছর যেভাবে শুরু করবেন

নতুন বছর যেভাবে শুরু করবেন
সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যায়। শুরু আর নতুনের উৎসবটা চিরস্থায়ী হয় না কখনোই। শেষ, হারিয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলাটা বেদনার, কিছুটা স্মৃতি, স্মৃতি কাতরতা থেকেই যায় সব কিছুর শেষে। তবে সব শেষ মানেই বেদনা আর শোক নয়। কিছু শেষের পর শুরু হয় নতুন আয়োজন, যুক্ত হয় নতুন অধ্যায়। বছরের শেষটাও অনেকটাই এমন। স্মৃতি-ফেলে আসা দিনগুলো শুধু ফ্রেমে বাধা হয়ে থাকে। শোক-দুঃখগুলো ভুলে মানুষ শুধু আনন্দ-উৎসব মনে রাখে, নতুনের আনন্দে ভাসে।

মানুষ স্বভাবতই উৎসব উদযাপনে ভাসতে পছন্দ করে। শোক-দুঃখ থেকে দূরে সরে বাঁচতে চায়। তাই নতুন বছর বরণের আয়োজনটা ঘটে করে পালন করে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণে। অনেকটা পাগলামি যেন পেয়ে বসে সবাইকে বছরের প্রথম প্রহরে।

তবে একজন মুমিনের উচিত ফেলে আসা দিনগুলোর ভালো-মন্দ হিসাব করা। কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা...।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

এদিকে হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর দাদা তাঁর পিতা ছাবিত (রহ.)–কে পারস্যের নওরোজের দিনে হজরত আলী (রা.)-এর নিকট নিয়ে গিয়েছিলেন এবং হজরত আলী (রা.)–কে কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে। তখন হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম।’ অর্থাৎ মুমিনের নওরোজ প্রতিদিনই। মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নতুন উদ্যমে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। (আখবারু আবি হানিফা রহ.)।

পেছনে ফেলে আসা বিষয়ের ভালো-মন্দ হিসাব করার বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দিতেন সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম মনীষীরা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলতেন, (আখিরাতে) তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগে নিজেরা নিজেদের হিসাব কর। একইভাবে আমল পরিমাপের আগে নিজেরা একটু মেপে দেখ। কেননা আগামী দিনের হিসাব-নিকাশের আগে আজ নিজের হিসাব মিলিয়ে নেওয়া সহজ। (ইগাসাতুল লাহফান, পৃষ্ঠা : ৯৪)

এছাড়া বছরের শুরুতে উৎসবের নামে অনেক অনর্থক কাজে জড়িয়ে পড়ে মানুষ। এতে যেমন গভীর রাতে শব্দ দূষণ হয় এর পাশাপাশি বৃদ্ধ-শিশুসহ অনেকেই কষ্ট পান। গভীর রাতে শব্দ করে মানুষকে কোনও ইবাদতের জন্য ডাকাও নিষেধ ইসলামে।

ওমর রা.-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি মসজিদ-ই-নববীতে এসে প্রতিদিন বিকট আওয়াজে ওয়াজ শুরু করেন। এতে পাশেই হুজরায় অবস্থানরত হজরত আয়েশা রা.-এর কাজে ব্যাঘাত হতো। তাই তিনি ওমর রা.-কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি ওই লোককে নিষেধ করে দেন। লোকটি কিছুদিন পর আবার ওয়াজ শুরু করলে তিনি তাকে শাস্তি দেন।([আখবারু মদিনা, ওমর ইবনে শাব্বাহ : ১/১৫)

এছাড়া উৎসবের নামে অনেক অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকাও ইসলামে শিক্ষা। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

অর্থসংবাদ/কেএ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা কোর্স সম্পন্ন
আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.
মিশরে বায়তুল মোকাররমের ইমামকে সম্মাননা প্রদান
জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় কোনটি?
জান্নাতিদের যে বিশেষ দানে সন্তুষ্ট করবেন আল্লাহ
নেক আমলের কারণে দুনিয়ায় যে উপকার পাবেন
রমজান শুরুর তারিখ ঘোষণা করলো আরব আমিরাত
একসঙ্গে অনেককে সালাম দিলে উত্তর দেবেন কে?
নবীজীর রওজায় বছরে একবারের বেশি যাওয়া যাবে না