জানা গেছে, আদানি গ্রুপের সাতটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এসব কোম্পানি পণ্য ব্যবসা, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, বন্দর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করছে। কোম্পানিগুলো হলো- আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনোমিক জোন, আদানি পাওয়ার লিমিটেড, আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি টোটাল গ্যাস এবং আদানি উইলমার লিমিটেড। হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরপরই এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে পতন হতে থাকে।
এশিয়া ইনডেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, আদানি উইলমার লিমিটেড এসএন্ডপি বিএসই আইপিও সূচক থেকে বাদ পড়বে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোম্পানিটিকে দুই সূচক থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে যা আছে
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘শেয়ার দরে কারচুপি’র অভিযোগ তুলে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ। এ প্রতিবেদনে গৌতম আদানির আর্থিক নয়ছয়ের বিষয় উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে শিল্পগোষ্ঠীটি বিশাল সম্রাজ্য গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
যেভাবে পতন শুরু আদানি গ্রুপের
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন গৌতম আদানি ও তার কোম্পানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিল্পপতি আদানির সম্পদের পরিমাণ কমতে থাকে। বিশ্বের তৃতীয় ধনী থেকে ছিটকে পড়েন ভারতীয় এই শিল্পপতি। ১২০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এখন দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২৪ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদানি গ্রুপের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদরের পতন অব্যাহত আছে। কোম্পানিগুলো এই সময়ে ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে।
আদানি গ্রুপের সাত কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে আদানি টোটাল গ্যাস লিমিটেড। ২৪ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত (১৫ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ৭২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এই সময়ে গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের শেয়ারদর কমেছে ৬৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আদানি ট্রান্সমিশন লিমিটেডের শেয়ারদর ৬৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কমেছে। এছাড়াও আদানি পাওয়ারের ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ, আদানি এন্টারপ্রাইজের ৪৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, আদানি উইলমারের ৩০ শতাংশ এবং আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনোমিক জোনের শেয়ারদর ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ কমেছে।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিতর্কের মুখে বড় সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নেয় আদানি গোষ্ঠী। বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় ২০ হাজার কোটির রুপির এফপিও। এফপিও বাতিল প্রসঙ্গে আদানি বলেছিলেন, ‘আমরা এফপিওর সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন পেয়েছি, যার জন্য আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছে কৃতজ্ঞ। বাজারের অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে পরিচালন পর্ষদ এই এফপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে চলমান দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এফপিও থেকে প্রাপ্ত পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেব।
ভারতীয় ব্যাংক এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বীমা সংস্থা আদানি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বা ঋণ দিয়েছে। শুধুমাত্র ভারতীয় লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন গত কয়েক বছরে ৩০ হাজার ১২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। তবে বিতর্কের মুখে পড়ায় সংস্থাটি আদানি গ্রুপে নতুন করে বিনিয়োগ করবে না বলে জানানো হয়েছে।