জরিপে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দুটি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ওপেক প্লাসের উত্তোলন কমানোর ঘোষণা। অন্যটি চীনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অব্যাহত চাহিদা বৃদ্ধি।
এপ্রিলের শুরুর দিকে ওপেক প্লাস আরো এক দফা জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা। উত্তোলন কমানোর ঘোষণা আসার পর পরই প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৯ থেকে বেড়ে ৮৬ ডলারে উন্নীত হয়। বছরের বাকি মাসগুলোতেও বিষয়টি দাম বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ। রয়টার্সের জরিপ বলছে, মহামারীর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীনের অর্থনীতি। দেশটি জিরো কভিড নীতি ও এ-সংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিয়েছে। ফলে সব খাতে বাড়ছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা। এ বিষয়ও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রসদ জোগাবে। ৪০ জন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকের ওপর এ জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপে দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৭ ডলার ১২ সেন্টে উঠে আসবে। মার্চে যা ছিল ৮৬ ডলার ৪৯ সেন্ট। বর্তমানে বাজার আদর্শটি লেনদেন হচ্ছে ৭৮ ডলারে। বছরের এখন পর্যন্ত বাজার আদর্শটির গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮২ ডলারে। ব্রেন্টের দাম বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে গড়ে ৯০ ডলার ৭২ সেন্টে উঠতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে থাকবে যথাক্রমে ৮৫ ডলার ৭৮ সেন্ট ও ৮৮ ডলার ৮৬ সেন্ট।
অন্যদিকে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮২ ডলার ২৩ সেন্টে পৌঁছার পূর্বাভাস মিলেছে। মার্চে এটি লেনদেন হয়েছে গড়ে ৮০ ডলার ৮৮ সেন্টে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাথিউ শেরউড বলেন, ‘ওপেকের উত্তোলন কমিয়ে দেয়া, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তোলকদের সরবরাহ তুলনামূলক সীমিত হয়ে আসা এবং চীনে অব্যাহত চাহিদা এ বছর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।’
জ্বালানি তেল রফতানিকারকদের জোট ওপেক ও এর মিত্র দেশগুলো ওপেক প্লাস নামে পরিচিত। জোটটি এপ্রিলের শুরুতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দেয়। জোটটির এমন সিদ্ধান্ত ছিল পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। নতুন সিদ্ধান্তে দৈনিক ১১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল করে উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়।
অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে দায়ী করা হচ্ছে। ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞার প্রধান লক্ষ্যবস্তু জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাত।
পশ্চিমাদের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া অর্থের জোগান দিচ্ছে জ্বালানি পণ্য রফতানি আয় থেকে। এসব আয় তলানিতে নিয়ে আসাই ছিল নিষেধাজ্ঞার মূল্য উদ্দেশ্য। কিন্তু এতে রাশিয়া থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল সরবরাহ কমে গেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক সরবরাহে, যা ঊর্ধ্বমুখী চাপে ফেলেছে জ্বালানি তেলের বাজারকে।
রয়টার্সের জরিপ বলছে, নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি কমে দৈনিক ১০ থেকে ২২ লাখ ব্যারেলে নামবে। এর মধ্যে বেশির ভাগ চাহিদাই আসবে চীন থেকে।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক বলছেন, ৯০ ডলার ছাড়ালেও এ বছর জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারে ওঠার সম্ভাবনা নেই। এর মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা।