এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করতে স্বর্ণের বারের শুল্ক বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে একটির বেশি (১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি) বার আনলে রাষ্ট্রের অনুকূলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান রয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ এবং ৭৩-এ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব সুদ দিতে হয়।
আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় বলা আছে, করদাতা যদি কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করেন, আবার এজন্য অনুমোদনও না নেন, সেজন্য তার পূর্ববর্তী বছর প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় অঙ্ক-ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবে। সেই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি মাশুলও গুনতে হবে। ৭৩-এ ধারায় বলা আছে, ৩০ নভেম্বরের পর কর কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও মাসিক ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
বাজেট অধিবেশনে উত্থাপিত নতুন আয়কর আইনে দেরিতে রিটার্ন জমার মাসিক জরিমানা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। এনবিআর ১ জুলাই অর্থাৎ বাজেট কার্যকরের দিন থেকেই নতুন আইন কার্যকর করতে চায়।
অন্যদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের সংশোধন আনা হচ্ছে। ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি ওজনের একটির বেশি স্বর্ণের বার আনলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার বিধান আনা হচ্ছে। একইসঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে স্বর্ণ বারের শুল্ক। বর্তমানে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণের বার আনা যায়। এই শুল্ক বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগে ২০ ভরি বারের জন্য যে টাকা (৪০ হাজার টাকা) শুল্ক দিতে হতো, ১ জুন থেকে ১০ ভরি ওজনের বারের জন্য একই পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে।
অবশ্য স্বর্ণালংকার আনার সুযোগ অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ১০০ গ্রাম (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালংকার আনতে পারবেন, এজন্য শুল্ক-কর দিতে হবে না। তবে এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনা যায় না।
গত বছর একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফিরে আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করেন। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে। ওই প্রতিবেদনে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে বলা হয়েছে, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে আসার ফলে অফিশিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমছে।