তবে লবণের দামের ঊর্ধ্বগতির বিপরীতে চামড়ার দাম কম হওয়ায় লোকসান গুনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। চামড়া শিল্পকে রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা প্রয়োজন।
জেলায় দুইটি চামড়ার আড়ত রয়েছে। একটি মান্দার ফেরিঘাটে এবং অপরটি বদলগাছীর চাকরাইলে। প্রতি বুধবার চাকরাইলে হাট বসে। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ আড়তে চলে বেচাকেনা।
চাকরাইল আড়তে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশের জয়পুরহাট এবং বগুড়ার ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করতে আসেন। ঈদ পরবর্তী সময়ে এ চামড়া আড়তে বেচাকেনা জমে উঠতে শুরু করেছে। তবে এবার ঢাকার ব্যবসায়ীরা না আসায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের তথ্যমতে, নওগাঁয় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন চামড়া ব্যবসায়ী আছেন। এরমধ্যে বড় ব্যবসায়ী ২৫ জন। ২০১৫ সাল থেকে ঢাকার ১৫টি ট্যানারি মালিকদের কাছে এ ২৫ জন ব্যবসায়ীর প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই টাকা তুলতে না পেরে তারা ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না।
এবছর জেলায় গরু ও মহিষের ৬৫ হাজার পিস এবং ছাগল ও ভেড়ার এক লাখ পিস চামড়া লবণজাত করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে চামড়া ব্যবসায় ধস নেমেছে। গত বছর প্রতি বস্তা লবণ ৮০০ টাকায় কিনলেও এবার ১ হাজার ৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। এছাড়া বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। কাঁচা চামড়া লবণজাত করে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি না হওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
উপজেলার ভরট্ট গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সুদেব বলেন, এবছর প্রতি পিস খাসির চামড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসেবে ১৫০ পিস কিনেছি। নিজের পারিশ্রমিক ছাড়াই প্রতি পিসে খরচ পড়েছে ২০ টাকা করে। হাটে বিক্রি করতে আসার পর ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা।
পাহাড়পুর গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী কৃষ্ণ বলেন, ছাড়লের চামড়া ১০ থেকে ২০ টাকা দামে ১০০ পিস কিনেছি। প্রতিপিসে দুই-তিন টাকা লাভ হয়েছে। এ লাভ দিয়ে তো আর সংসার চলবে না।
সাপাহার উপজেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জিতেন বলেন, এবছর এক বস্তা লবণ ১ হাজার ৫০ টাকা টাকা দামে কিনতে হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৮০০ টাকা। প্রায় ৬০০ পিস চামড়া দেড় লাখ টাকায় কিনেছি। দাম কম হওয়ায় প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে আমরা এক সময় হারিয়ে যাবো। চামড়া শিল্পকে রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
জয়পুরহাট থেকে আসা চামড়া ব্যবসায়ী সুজাউল ইসলাম বলেন, সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে সে দামে আমরা চামড়া বিক্রি করতে পারছি না। এ হাটে চামড়ার দাম কম। আমাদের কম দামে বিক্রি করতে হবে। ২০০৪ সাল থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে আট লাখ টাকা পাওনা আছে। এবছর এক টাকাও পাইনি। ধারদেনা করে কিছু টাকা সংগ্রহ করেছি। ঢাকায় বিক্রি করতে গেলে বাকি দিয়ে বিক্রি করতে হবে। তারা ১৫ দিনে টাকা পরিশোধের কথা বলে বছর পেরিয়ে যাবে তারপরও দেবে না।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহ-সভাপতি ও চাকরাইল চামড়া আড়তের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় দুইটি চামড়ার আড়ত রয়েছে। তার মধ্যে একটি চাকরাইলে। ঈদ পরবর্তী এ আড়তে গরুর চামড়ার সরবরাহ কম হলেও ছাগলের চামড়ার ভালো সরবরাহ রয়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা না আসায় চামড়ার দাম তুলনামূলক কম। তারপরও ঈদের পর আড়তে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। আর বছরের অন্য সময়ে প্রতি হাটে প্রায় ৫০ হাজার টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। তবে এবছর লবণের দামের কারণে ব্যবসায়ীদের বেহাল অবস্থা।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, এবছর জেলায় গরু ও মহিষের চামড়া ৬৫ হাজার পিস এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া এক লাখ পিস লবণজাত হয়েছে। বর্তমানে লবণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর লবণ ১৫ টাকা ৯০ পয়সা কেজিতে কিনলেও এবছর ২১ টাকা কেজি। জেলায় প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হয়। বড় আকারের একটি চামড়া প্রস্তুত করতে লবণ ও শ্রমিক দিয়ে প্রায় ২৫০ টাকা খরচ পড়ে। এতে করে কাঁচা চামড়ার দাম কম দেখা যায়। তখন আমাদের দোষারোপ করা হয়। আসলে কাঁচা চামড়ার দাম কম না।
তিনি বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি বেশি। তারপরও চামড়া ফেলে না দিয়ে লবণ দিয়ে রাখা হচ্ছে। অন্তত চামড়া নষ্ট না হলে লবণের দামটা উঠে আসবে। কোরবানির সময় লবণের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।