স্বেচ্ছায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর মেয়াদ আরো এক মাস বাড়াল সৌদি আরব। অর্থাৎ দেশটি সেপ্টেম্বরে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমাবে। মূলত জ্বালানি তেলের বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
চলতি বছরের জুনে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর মিত্র জোট ওপেক প্লাস সম্মিলিতভাবে উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী বছর পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর রাখার বিষয়ে একমত হয় সদস্যদেশগুলো। ওই সময় সৌদি আরব জোটের পাশাপাশি এককভাবেও উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বাজারকে বাড়তি সহায়তা দেয়া। সে সময় শুধু জুলাইয়ের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। পরবর্তী সময়ে উত্তোলন কমানোর মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে আগস্ট পর্যন্ত নেয়া হয়। এবার তা আরো বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেয়া হলো।
এদিকে সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক বাজারে ফের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি চীনে অর্থনৈতিক প্রণোদনা কর্মসূচিও দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে। সবশেষ শুক্রবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৪ ডলারে উন্নীত হয়।
লম্বা সময় ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতির কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার কমছে। শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একের পর এক সুদহার বাড়াচ্ছে। ফলে নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি তেলের বাজার। দাম কমতে থাকায় বিপাকে পড়েছে জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমানোর মাধ্যমে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব, রাশিয়াসহ শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলো। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবেই নতুন করে উত্তোলন কমানোর মেয়াদ বাড়ানো হলো।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সরবরাহ সংকটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ১৪ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। তবে মার্চ থেকে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় দাম কমতে শুরু করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দাম কমেছে গড়ে ৪০ শতাংশ।
চলতি বছরের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস বাড়িয়েছে রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক। অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও আগামী বছরের চাহিদা নিয়ে আশাবাদী জোটটি। কারণ চীন ও ভারত অব্যাহত জ্বালানির ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
মাসভিত্তিক এক প্রতিবেদনে ওপেক জানায়, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ২৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল করে বাড়তে পারে। আগামী বছর চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে দৈনিক ২২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থাও আগামী বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সংস্থাটির পূর্বাভাসের তুলনায় ওপেক প্লাসের পূর্বাভাস দ্বিগুণ বেশি।
জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে ওপেক ও এর মিত্র জোট ওপেক প্লাসের উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তও বাজারকে চাঙ্গা করে তুলছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে জোটটি গত জুন থেকে আরো ব্যাপক মাত্রায় উত্তোলন কমানোর পদক্ষেপ হাতে নেয়।
ওপেকের প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, জোটটির আগাম পদক্ষেপ এবং উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত বাজারে স্থিতি ফিরিয়েছে। আগামী বছর পর্যন্ত এ স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকবে। ২০২৪ সালে চীনের অর্থনীতিতে গতি ফিরবে। ফলে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি আসবে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। বিষয়টি জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করবে।
অর্থসংবাদ/এসএম