যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির গতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফেডারেল রিজার্ভের কর্তাব্যক্তিরা। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে আরো এক দফা সুদহার বাড়ানো হতে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুক্তবাজার পরিচালনবিষয়ক বিভাগ দ্য ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (এফওএমসি) সভায় এমনটাই জানানো হয়। সর্বশেষ জুলাইয়ের সভায় সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফেড। একে ধারণা করা হয়েছিল সর্বশেষ ধাপ হিসেবে।
এফওএমসির সভায় বলা হয়েছে, ‘ফেডের প্রত্যাশার তুলনায় মূল্যস্ফীতি এখনো যথেষ্ট উঁচুতে অবস্থান করছে। শ্রমবাজারও প্রত্যাশা অনুযায়ী অনুকূলে নেই। ফলে কমিটির অধিকাংশ সদস্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় আরো বেশি কঠোর করা হতে পারে মুদ্রানীতি।’
জুলাইয়ের বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গত ১৬ মাসে মোট ১১ বার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত ২২ বছরে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ফেডের নীতিনির্ধারণী সভার অধিকাংশ সদস্যই মনে করেন, মূল্যস্ফীতির অভিঘাত দীর্ঘ হবে। তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হলে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তই শেষ রাস্তা হয়ে উঠতে পারে।
জুলাইয়ের সভায় ফেডের কর্তাব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন। কোনো কোনো সদস্য নতুন করে সুদহার বাড়ানোর বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে সম্ভাব্য নিয়ামক ও প্রভাবকের চাপ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়। সভায় অংশগ্রহণকারীরা এ বিষয়ে একমত যে মূল্যস্ফীতির মাত্রা বর্তমানে এখন পর্যন্ত অসহনীয় হলেও এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। সভার অধিকাংশ সদস্যই ছিল সুদহার বাড়ানোর পক্ষে। তবে যারা বিরোধিতা করেছে, তারা মূলত অপেক্ষা করতে চেয়েছে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে।
সর্বশেষ আলোচনায় অর্থনীতির মন্থরতা ও বেকারত্ব বাড়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এর আগে ব্যাংক খাতের বিপর্যয় চলতি বছরের মাঝামাঝি বড় ধরনের মন্দা তৈরি করতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বিশ্লেষকরা। তবে বাণিজ্যিক আবাসন খাত থেকে ঝুঁকি এখনো সরেনি।
ভবিষ্যৎ করণীয় হিসেবে সদস্যরা গৃহীত পদক্ষেপে গতি হারিয়ে ফেলা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিকে বিবেচনা করেছেন। ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বাস্তবিক অর্থে তা অনেক উপরে রয়েছে। তবে এটি ২০২২ সালের জুনের মূল্যস্ফীতির পর থেকে এখন পর্যন্ত কিছুটা উন্নতির সাক্ষ্য দেয়।
তবে নীতিনির্ধারকরা এত দ্রুত নিজেদের বিজয়ী ভাবার কথা ভাবছেন না। বরং তারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চান। বিশেষ করে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়ায়। নীতিগত ও পদ্ধতিগত ভুলের জন্য তখন অর্থনীতি প্রতিকূলে বাঁক নিয়েছিল।
২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জিডিপি বেড়েছে গড়ে ২ শতাংশের মতো। তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। চাকরিপ্রাপ্তির হার কিছুটা ধীর হয়েছে। কিন্তু সূচক এখনো ঊর্ধ্বমুখী। বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ষাটের দশকের পর বেকারত্বের এ হার সর্বনিম্ন। তাই ফেডের কোনো কোনো সদস্য মনে করতে চান সুদহার বাড়ানোর দৌরাত্ম্য শেষ হতে চলছে।
বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা করছেন, ফেড আর সুদহার বাড়াবে না। ফেডের পরবর্তী সভা ১৯-২০ সেপ্টেম্বর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহারকে বর্তমান সীমায়ই অপরিবর্তিত রাখবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এফওএমসি সভার দাবি, অধিকাংশ সদস্যই মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কিত। যা আগামীর মুদ্রানীতিতে সুদহারের আরো এক দফা বাড়ানোর আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
অর্থসংবাদ/এসএম