চীনে বিশ্বের ৬০ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন

চীনে বিশ্বের ৬০ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন
বৈশ্বিক বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে শীর্ষস্থানে চীন। ২০২২ সালে খাতটিতে উৎপাদনের ৬০ শতাংশই করেছে দেশটি। ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিলের (জিডব্লিউইসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করা শীর্ষ কোম্পানি গোল্ডউইন্ড। বৈশ্বিক বাজারের ১৩ শতাংশ হিস্যা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিপরীতে ১৪ শতাংশ হিস্যা নিয়ে প্রথমে রয়েছে ডেনমার্কের ভেস্তাস। তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা চীনা কোম্পানি এনভিশনের হিস্যা ৯ শতাংশ এবং ষষ্ঠ স্থানে থাকা মিংইয়াং স্মার্ট এনার্জির হিস্যা ৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করা শীর্ষ ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ১০টিই চীনের। সার্বিকভাবে দেশটির সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৭ শতাংশ ছিল চীনের দখলে।

স্পেনের বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সিমেন্স গামেসা রিনিউয়েবল এনার্জি তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারের ১০ শতাংশ হিস্যার দখল তার হাতে। অথচ ২০১৮ সালে কোম্পানিটির অংশগ্রহণ ছিল ১২ শতাংশ। তালিকায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে সার্বিকভাবে পতন পরিলক্ষিত হয়। ২০১৮ সালে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর হিস্যা ৫৫ শতাংশ ছিল, যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। আর ছেড়ে দেয়া জায়গা পূরণ করেছে চীনা কোম্পানিগুলো। ২০২০ সালেই চীন তাদের অতিক্রম করে যায়।

চীনা সরকার বেশ জোরেশোরেই দেশের বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তৎপর। কেবল বিদ্যুতের ঘাটতি কিংবা বায়ুদূষণ রোধের জন্য না, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তিকে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তার জন্য দফায় দফায় নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। ২০১৯ সালে সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রিড নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানায়। বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ ও সরকারের নীতিমালা প্রণীত হয়, যা খাতটির সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছে। চীনা উৎপাদনকারীরা ছড়িয়ে পড়েছেন ইউরোপ ও জাপানে। মিংইয়াং স্মার্ট এনার্জি তাদের উইন্ড টারবাইন স্থাপন করেছে ইতালি ও জাপানের টোয়ামা প্রদেশে।

২০১০ সালের দিকেও ইউরোপ নেতৃত্ব দিচ্ছিল বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। কিন্তু উচ্চ খরচ, মূল্যস্ফীতি ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে অগ্রগতি ধীর হয়ে যায়। সিমেন্স গামেসা রিনিউয়েবল এনার্জি আর্থিক সংকটে পড়ে, যা পরবর্তী সময়ে জার্মানির সিমেন্স এনার্জি অধিগ্রহণ করে নেয়। চীনা উৎপাদনকারীরা সে জায়গাটিতে এগিয়ে গেছে। ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেনজির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারের প্রতিযোগিতায় চীন যদি খরচ কমানোর নীতি অব্যাহত রাখে তাহলে নীতিনির্ধারকদের জন্য চীনা কোম্পানিগুলোকে প্রতিহত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু চীনা উৎপাদনকারীদের ওপর একচেটিয়া নির্ভরতা পরবর্তী সময়ে সরবরাহ সংকট তৈরি করতে পারে। এমনিতেই চীন-যুক্তরাষ্ট্র টানাপড়েন অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে চলছে।

২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবে ১ লাখ ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হলে সেটি হবে ১১০টি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে চীন থেকে সোলার প্যানেল আমদানি ঠেকাতে উচ্চ কর ধার্য করেছে। খুব সম্ভবত চীনা টারবাইন ঠেকাতেও নেয়া হবে একই পদক্ষেপ।

জাপান অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে অসফল হয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ও হিটাচি পিছু হটেছে তাদের উইন্ড টারবাইন উৎপাদন প্রকল্প থেকে। জাপান সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে চলছে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটি ৩০ থেকে ৪৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চায় বিদেশী বায়ুশক্তির বাজার। শিগগিরই তোশিবা ও জিই অংশীদারত্বের চুক্তিতে যাবে বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করতে, ২০২৬ সাল থেকে জেনারেটর ও অন্যান্য উপাদান তৈরি করবে তারা। যদিও ক্রমবর্ধমান চীনের আধিপত্যে বাজারের কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

অর্থসংবাদ/এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেট্রোল-ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণা
ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে মুসলিম ৬ দেশ
মারা গেছেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর
২০২৩ এ আলোচিত বিশ্বের সেরা ১০ ঘটনা
ব্রিকসে যোগ দেবে না আর্জেন্টিনা
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী
১০ টাকাতেই মিলবে বই
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট
সৌদি আরবে আরো একটি স্বর্ণের খনির সন্ধান
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপলো ইন্দোনেশিয়া