২০৩৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পর্যটন অর্থনীতি ১৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে খাতটির হিস্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০৩৩ সালের মধ্যে খাতটি সম্প্রসারিত হয়ে দাঁড়াবে মহামারীর আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশিতে। দেশে দেশে পর্যটন খাতের প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ অনুকূল পরিবেশ এবং চীনা নাগরিকদের পর্যটন প্রবণতা এ সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি)। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
ডব্লিউটিটিসি আগামী ১০ বছরের পর্যটন পরিস্থিতি নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে বিশ্বের প্রধান পর্যটন বাজার ও অর্থনীতি নিয়ে। জিডিপিতে অবদানের ভিত্তিতে মহামারীর আগে বিশ্বের প্রধান পাঁচ পর্যটন অর্থনীতি ছিল যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও জাপান। বর্তমান উপাত্তে জাপান টপকে গেছে যুক্তরাজ্যকে। সেরা দশের তালিকায় রয়েছে ফ্রান্স, মেক্সিকো, ইতালি, ভারত ও স্পেনের নামও।
দেশের শ্রমবাজারে পর্যটন খাতের অবদান নিয়েও আলোচনা হয়েছে প্রতিবেদনে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পর্যটন খাতে ২০৩৩ সালে ৪৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০১৯ সালে যেখানে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। অর্থাৎ বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের প্রতি নয়জনের একজনই জড়িত থাকবে পর্যটনের সঙ্গে। বৈশ্বিক পর্যটনের আকারই কেবল বিস্তৃত হচ্ছে না, দ্রুতগতিতে সম্প্রসারণ করছে অর্থনীতি। বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন সংস্থার প্রেসিডেন্ট জুলিয়া সিম্পসন দাবি করেছেন, বৈশ্বিক জিডিপি বার্ষিক ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু পর্যটন খাতের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে পর্যটন অর্থনীতিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। পর্যটন খাতের আকার পরিমাপ করার সময় দুটি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়। কোনো দেশের নাগরিকরা অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করার সময় কী পরিমাণ খরচ করছে এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকরা সে দেশে এসে কী পরিমাণ খরচ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খাতটি বার্ষিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের জায়গা নিয়ে আছে। কিন্তু ১০ বছরের মধ্যেই দেশটি মসনদ হারাবে চীনের কাছে। ২০৩৩ সালে চীনের পর্যটন খাত ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উত্তীর্ণ হবে। চীনের অর্থনীতিতে হিস্যা দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ১ শতাংশে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন শিল্প ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উত্তীর্ণ হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে হিস্যা হবে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।
মহামারীর আগে বৈশ্বিক পর্যটন খাতে চীনা নাগরিকদের অংশগ্রহণ ছিল ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভ্রমণসংশ্লিষ্ট সব ধরনের বিধিনিষেধ সরিয়ে নেয়া হয়। যদিও পাসপোর্ট ও ভিসা প্রক্রিয়ায় বিলম্বের মতো জটিলতা এখনো খুব সাধারণ দৃশ্য, যা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য অর্থনীতি এক্ষেত্রে ভালো করেছে। উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপে পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার গতি ছিল শক্তিশালী। ডব্লিউটিটিসির দাবি অনুসারে, চলতি বছরের শেষ দিকেই বৈশ্বিক পর্যটন খাত মহামারীপূর্ব পরিস্থিতিকে ছাড়িয়ে যাবে। চীনা পর্যটকদের মধ্যে পুরোদমে ভ্রমণ প্রবণতা চালু হতে পারে ২০২৪ সালের শুরুর দিকেই, যা বৈশ্বিক সূচকে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন ঘটাবে। ২০৩৩ সালে বৈশ্বিক পর্যটনে চীনা নাগরিকদের অংশগ্রহণ ২২ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকার পরও প্রাধান্য পাচ্ছে ভ্রমণ ও পর্যটন। এমনকি ছোট পরিসরেও পর্যটন সূচক ঊর্ধ্বমুখী। পর্যটন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ভার্চুয়োসোর জরিপ অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৬ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার লেনদেন হয়েছে পর্যটন খাতে। ২০১৯ সালের তুলনায় ৬৯ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে খাতটিতে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য টিকিট ক্রয় ও হোটেল ভাড়ার প্রবণতা এর মধ্যেই শক্তিশালী থাকার প্রমাণ মিলেছে। সাধারণত প্রাকৃতিক স্থানগুলোর দিকে যেতেই মনোযোগী হয়ে উঠছেন পর্যটকরা।
অর্থসংবাদ/এসএম